গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হোক
আমরা সবাই জানি গত বছর দেশে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। এ অভ্যুত্থানের পেছনে দীর্ঘ ১৭ বছরের অগণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষোভ লুকিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলো সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব এদেশের অর্থনীতিকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এসব সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বিষয় হলো, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন এবং জুলাই ঘোষণা পত্র পাঠ করেছেন। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, ২ জুলাই সনদ ঘোষণা এবং তাতে সব রাজনৈতিক অংশীজনের সম্মতি এবং স্ব্ক্ষার রয়েছে।
যদিও এনসিপি এতে এখনও স্বাক্ষর করেনি। গণতান্ত্রিক কাঠামো বিনির্মাণের কাজটি অতটা মসৃণ নয়। সরকারকে এটি করতে হয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। সারা দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এখন অনেক দলের নেতা কর্মিরা সেই কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নত গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর সংস্কার হওয়া জরুরি। তা না হলে জনগণ সে উদ্দেশ্য নিয়ে পতিত সরকারকে বিদায় করেছে, তা সাফল্যের মুখ দেখবে না।
ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো ভোটাধিকার হরণের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এ নির্বাচনগুলোতে প্রহসনের মাধ্যমে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছিল তাদের মৌলিক অধিকার থেকে। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা, যারা ২০০৮ সালের পর থেকে ভোটার হয়েছেন, তারা কখনোই প্রকৃত অর্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা পাননি। তাই, এবারকার নির্বাচন যেন হয় গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন, সেটাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুনপাশাপাশি রাষ্ট্র সংস্কার কাজও যেন নির্বাচনের আগেই সমাপ্ত হয়- সেটাও অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব, রাজপথে আবু সাঈদসহ দু’হাজার তরুণের শহীদ হওয়া শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য হয়নি। পুরনো দুর্নীতিগ্রস্ত, মরা-পঁচা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের জন্য জেন-জি এই আন্দোলন করেছিল। জেন-জিদের সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে অবশ্যই। গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার এই সন্ধিক্ষণে দেশবাসীর প্রত্যাশা একটি নতুন সূচনার। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যেন নিজের ইচ্ছায় প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার ফিরে পায়, সেটিই হোক সব প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য।
নির্বাচন কমিশন, সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল সব পক্ষের দায়িত্ব এই নির্বাচনকে জাতির জন্য একটি ইতিহাস গড়ার সুযোগে রূপান্তর করা। রাস্তায় হানাহানি, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা কেবল জনগণের আস্থা নষ্ট করবে গণতন্ত্রকে দুর্বল করবে। প্রতিটি রাজনৈতিক শক্তির উচিত জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা।
জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার দ্রুত শেষ হবে ঘোষিত নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রের শক্তি আসে জনগণের আস্থা থেকে, আতঙ্কও ভয় থেকে নয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সরকার একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে সঠিক পথ নির্দেশনা দেবে। দেশের সংকটকালীন তরুণ নেতৃত্বকে সরকারের পাশে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।
মন্তব্য করুন








_medium_1761651069.jpg)

