আগুনে নাশকতার শঙ্কা
পাঁচদিনের ব্যবধানে দেশের তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। ধারাবাহিক ও ভয়াবহ এসব অগ্নিকান্ড এখন আর কোনোভাবেই নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। এগুলো দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসব ঘটনা সুপরিকল্পিত ও গভীর দেশ বিরোধী নাশকতার অংশ কি-না সে বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে (কেপিআই) নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে আরো তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কার্গোভিলেজে আগুন লাগার ঘটনায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য অনুসারে আমদানি করা ওষুধ, টেলি কমিউনিকেশনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, গার্মেন্টস পণ্যসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ভস্মীভূত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে কেমিক্যাল গোডাউন ও পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ড, ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) একটি বৃহৎ কারখানায় বিধ্বংসী আগুন এবং সর্বশেষ গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে চালানো এক গুরুতর ষড়যন্ত্র বলেই মনে হয়।
শনিবার রাতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্য প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আনসারে ২৫ সদস্য সহ ৩৫ জন আহত হন। রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স শাখার পরিচালক লে: কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২৭ ঘন্টা পর আগুন পুরোপুরি নিভেছে।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে মনে করছে, অগ্নিসন্ত্রাসীদের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, দেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হানা এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ও নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন সাংবাদিকদের জোর দিয়ে বলেছেন, বিমান বন্দরে অগ্নিকান্ড তদন্তে নাশকতাসহ কোনো কিছু উড়িয়ে দেব না। গোয়েন্দা সংস্থা সহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে এর রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করব। উপদেষ্টার এই বক্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে নাশকতার সম্ভাবনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তথ্য মতে, ১৪ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীতে ভয়াবহ দুটি অগ্নিকান্ড ঘটে। এর একটি মিরপুরের শিয়ালবাড়ির রাসায়নিকের গুদামে ও আরেকটি এয়ারপোর্টের কার্গোভিলেজে। আর ১৬ অক্টোবর আগুন লাগে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি তোয়ালে কারখানায়। এয়ারপোর্টের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে শনিবার দুপুর সোয়া ২টায়। আর ১৮ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ঢাকার ধামরাইয়ে বারোবাড়িয়া এলাকার ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানায় আগুন লাগে।
রাজধানীতে কেন বারবার আগুন লাগে, এই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। রাজধানীতে ঘন ঘন আগুন লাগার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুরনো ভবন ও সরু রাস্তা, যেখানে জরুরি পরিষেবা পৌঁছানো কঠিন এবং বিভিন্ন রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের (যেমন-গার্মেন্টস, কেমিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স), উপস্থিতি। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট এবং নিয়ম না মানা ও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবহারের অভাবও এর জন্য দায়ী।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এসব অগ্নিকান্ডের পেছনে কোনো অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র আছে কি-না। কিন্তু দেশবাসীসহ রাষ্ট্রের কর্ণধাররা সন্দেহ পোষণ করছেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এসব করছে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের এজেন্টরা। এসব অগ্নিকান্ড দেশবিরোধী নাশকতার ফল না গাফিলতির কারণে ঘটছে, দ্রুত এর সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত কারণ বের করা জরুরি। যদি অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে অপরাধী চক্রকে পাকড়াও করে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
মন্তব্য করুন









_medium_1761045907.jpg)
