মাদকের বিপজ্জনক বিস্তার

বর্তমান পৃথিবীর ভয়াবহতম বিপদ মাদকদ্রব্য। একটি জাতি গঠনের প্রধান দায়িত্ব তরুণদের। আর মাদকের ছোবলের প্রধান শিকার তরুণরাই। আমাদের সমাজেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকের ব্যবহার। সরকারের নানা রকম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। দেশব্যাপী চলছে মাদক বিরোধী অভিযান। ধরাও পড়ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। উদ্ধার হচ্ছে বিপুল মাদক সামগ্রী। কিন্তু পর্দার আড়ালের মাদক গডফাদারদের পাকড়াও করা যাচ্ছে না।
শহরের অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও হাত বাড়ালেই মিলছে মাদকদ্রব্য। আর এর ভয়াবহতায় জাতি হিসেবে ক্রমেই পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। মাদকদ্রব্য দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে প্রধানত সীমান্ত এলাকা দিয়ে। সীমান্তবর্তী দুটি দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবাধে দেশের ভেতরে ঢুকছে নানা রকম মাদকদ্রব্য।
সীমান্তে যারা এসব আটকাবে তাদেরই অসতর্কতার সুযোগে সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ মাদক বাংলাদেশে আসছে, যা পরবর্তীকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। বিগত দেড় দশকে পতিত হাসিনা সরকারের আমলে মাদক ব্যবসার বিস্তার ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সারা দেশে গড়ে তোলে মাদক ব্যবসার গভীর নেটওয়ার্ক। তখন দেশজুড়ে মাদকের এই অপ্রতিরোধ্য বিস্তারের পেছনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরোক্ষ মদদ ছিল।
পত্র-পত্রিকার খবরে আমরা দেখেছি মাদক এক ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে উঠেছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হচ্ছে এবং এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। নিকট অতীতে এক সমীক্ষায় প্রকাশ, দেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষার্থীরাও মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। শিশু, কিশোর, যুবক অর্থাৎ যারা আগামীর ভবিষ্যৎ, দেশ-জাতির সম্পদ তারাই যদি এভাবে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ খুব বিপজ্জনক।
মাদকের বিরুদ্ধে দেশে সামাজিক আন্দোলন এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বেগবান হওয়া সত্ত্বেও এই চিত্র সঙ্গতই প্রশ্ন দাঁড় করায় অপশক্তি কি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পরিকল্পিত উপায়ে প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে? দেশে ভয়াবহভাবে মাদকের বিস্তার এ প্রশ্নও দাঁড় করায় -প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সবরকম নজরদারি এড়িয়ে মাদকের আগ্রাসন বেড়ে চলেছে কিভাবে ? আফ্রিকা থেকে নতুন নতুন ভয়াবহ সব মাদক দেশে আসে কোন পথে?
আরও পড়ুনকখনও কখনও মাদকের চালান আটক হলেও সব যে আমরা আটক করতে পারছি, তার গ্যারান্টি নেই। পত্র-পত্রিকার খবর হলো, ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে মরণ নেশা আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। সেবনকারীদের মধ্যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার কারণে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে এখন অনেক মাদকাসক্তই তা ব্যবহার করছেন ফলে চার বছরে আইসের চাহিদা বেড়েছে চারগুণ। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জলে-স্থলের ২০ রুট দিয়ে ঢুকছে এ মরণনেশা। আইস আসে মিয়ানমার থেকে।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় ধরনের মাদকের চালান প্রায়ই ধরা পড়ছে যা আমাদের মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন এলএসডি, গাজা, ভাং, চরস, আফিম থেকে শুরু করে এখন সুদূর আফ্রিকা থেকে আসছে খাত নামের ভয়ংকর মাদক। মিয়ানমার থেকে আইস। এটা সত্য, বাংলাদেশে ইয়াবা আর ফেনসিডিলের বাজার তৈরি হওয়ায় মিয়ানমার এবং ভারত সীমান্তে অসংখ্য ইয়াবা আর ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে উঠছে।
এসব কারখানায় বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্য মিয়ানমার থেকে মরণনেশা ইয়াবা এবং ভারত থেকে ফেনসিডিল উৎপাদন করে তা নির্বিঘ্নে সরবরাহ করা হচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, এসব দেশে মাদক তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্যই। আমরা মনে করি, মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের অনেক রাঘববোয়াল জড়িত।
এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারলে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে না। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে সর্বাগ্রে। এ ছাড়া আইনের পক্ষপাতহীন প্রয়োগে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নেবে- এই প্রত্যাশা আমাদের।
মন্তব্য করুন