ভিডিও শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা

মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা

নিয়ম না মেনে উচ্চ ফলনের আশায় কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই ফল ও সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন কৃষকরা। ফলে কৃষি পণ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সেই সঙ্গে দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়, মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এদিকে, এমন পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিচ্ছে কিছু ওষুধ কোম্পানির বিজ্ঞাপন।

বিশেষ করে এসব কোম্পানি বিজ্ঞাপনের স্থান হিসেবে ফসলের ক্ষেত বেছে নিয়েছে। যথেচ্ছা বিষ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে। পরিবেশ ও পুষ্টিবিদদের দাবি, সরকার যেন ফসলে বিষ ব্যবহারে একটি নীতিমালা জারি করে। যাতে ফসলে যত্রতত্র বিষ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেত না পারে কোম্পানিগুলো। এ অবস্থা থেকে থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষি কাজে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করারও পরামর্শ তাদের।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন ও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট আবাদি জমির সাড়ে ৭২ শতাংশ জৈব ঘাটতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌছেছে। ফলে উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে মাটি। ফসল উৎপাদনের জন্য সুষম মাটিতে পাঁচ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন, অথচ দেশের অধিকাংশ এলাকায় জৈব পদার্থের উপাদান এক শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। এতে ভেঙে পড়েছে মাটির স্বাস্থ্য। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। মাটি হচ্ছে কৃষির মূল ভিত্তি।

ফসলের প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনসমৃদ্ধ মাটি না হলে কাঙ্খিত ফসল পাওয়া যায় না। মাটি এক জীবন্ত সত্তা। তাই মাটিরও ভালো বা মন্দ লাগা আছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাড়তি খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে একই জমিতে বছরে বর্তমানে তিন থেকে চারবার ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল অথবা হাইব্রিড জাতের ফসল। এসব ফসল মাটি থেকে বিপুল পরিমাণ পুষ্টি উপাদান শোষণ করছে। উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটা ও নানা উন্নয়ন কাজে। ফলে জমি হারাচ্ছে স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা। কাজেই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতি জরুরি। মাটিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত লাভজনক। মাটিতে এক মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে পাঁচ মার্কিন ডলার প্রতিদান পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

মাটির উর্বরতা ও শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পাশাপাশি জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদনের খরচও বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় হচ্ছে না উপাদান। ফলে কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। অন্যদিকে উৎপাদনের তুলনায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের তুলনায় লাভ কম পাচ্ছেন কৃষক। 
সাধারণভাবে জৈব খাদ্য অথবা অর্গানিক ফুড বলতে কোনো ধরনের রাসায়নিক হরমোন বা কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই উৎপাদিত খাবারকে বোঝায়।

এ কারণে অর্গানিক খাবার শতভাগ নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। ফলে সারা বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ক্রমেই বাড়ছে অর্গানিক চাষাবাদ। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে, বলা চলে আদিম যুগে। এখন বিশ্বের যে সব দেশে ১ শতাংশেরও কম জমিতে অর্গানিক চাষ হচ্ছে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। তাও আবার অনেক দেশের পেছনে। এই সময় দেশের মাত্র ৬ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে অর্গানিক চাষাবাদ হচ্ছে। যা মোট চাষযোগ্য জমির মাত্র দশমিক ১ শতাংশ। এশিয়ার অধিকাংশ দেশই বাংলাদেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে।

সঠিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাত এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। রাসায়নিক ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে এবং বিষ ব্যবহারে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ভিডিও বানানোর নামে হাত ধরছে, এটা কি ব্যবসা?’ | Agargaon Cake | Daily Karatoa

কিছু উপদেষ্টার থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক থাকতে বললেন মিয়া গোলাম পরওয়ার | PR | Daily Karatoa

বাংলাদেশিদের সমাবেশে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র প্রার্থী মামদানি

বাংলাদেশ-বাহরাইন বৈঠক: শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার আহ্বান

লিসবনে প্রবাসীদের উৎসব, দূর দেশে আপনজন

কেক পট্টিখ্যাত আগারগাঁওয়ে চলছে পুলিশের অভিযান । cake | Daily Karatoa