ভিডিও শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

ওষুধের দাম বেড়েছে

ওষুধের দাম বেড়েছে

মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম চিকিৎসা। অনেক সময় এ চিকিৎসাই মানুষের জীবন রক্ষা করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিত্য পণ্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ওষুধের দামও লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ফলে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে হলেও ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছে। জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়লে সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচবে?

বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। বিগত পতিত সরকারের আমলে নানা অজুহাতে প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম কয়েকদফা বাড়ানো হয়। সরকার পতনের পর গত কয়েক মাসে কোনো কোনো ওষুধের দাম ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রায় আড়াইশ ওষুধ কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিন-চারটি ওষুধ কোম্পানি নিজেদের মতো দাম আকাশচুম্বী করে বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। ওষুধ প্রশাসন কেন তাদের এত বেশি দাম বাড়ানোর সুযোগ দেয় সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। এক কোম্পানির সঙ্গে আরেক কোম্পানির ওষুধের দামের ব্যবধান দুই থেকে চার টাকা থাকতে পারে, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্থক্য ২০-২৫ টাকাও রয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, দেশে বছরে মোট স্বাস্থ্য ব্যয় ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ওষুধের পেছনে ব্যয় হয় প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। ওষুধের পেছনে এই খরচের ৯৭ শতাংশ যায় ব্যক্তির পকেট থেকে। মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ জোগান দেয় সরকার, ১ দশমিক ২ শতাংশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী ও দশমিক ৪ শতাংশ স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা জোগান দেয়। বিশ্লেষকরা বলেন, দেশে ওষুধের দাম নিয়ে বিশৃঙ্খলা চলছে।

যাদের এটা মনিটরিং করার কথা তারা কতটা করছে তা দেখার বিষয়। ওষুধের পেছনে মানুষের বছরে বিপুল অর্থ খরচ হয়। সরকারের ওষুধ কোম্পানির দুই দিক থেকে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময় রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নানা কারণে বাংলাদেশে ওষুধের দাম বাড়ে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা এমআরপ্রথা।  এই এমআররা ডাক্তারদের বিভিন্ন কোম্পানির নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখতে প্রলুব্ধ করেন। আর সে জন্য এক শ্রেণির ডাক্তারকে দামি দামি উপহার, বিদেশ ভ্রমণ, নগদ অর্থসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, শুধু প্রচারেই ওষুধ কোম্পানিগুলো শত কোটি টাকা খরচ করে। ফলে ওষুধের খরচ বেড়ে যায়। আর সেই বর্ধিত খরচ পরিশোধে বাধ্য হয় রোগীরা। বিক্রেতারাও সুযোগ বুঝে ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেন। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, বাজারে ওষুধ নাই হয়ে যায়।

আবার বেশি টাকা দিলে একই বিক্রেতা একই ওষুধ এনে দিতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ মানুষ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। শুধু চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতি বছর ৬২ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস’- এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৬৯ শতাংশ পকেট থেকে খরচ করতে হয়।

আর এই স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৪.৬ শতাংশই খরচ হয় ওষুধ কেনা বাবদ, টাকার অঙ্কে যা ৩৬ হাজার কোটি। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের মতো। এর মধ্যে ৫৯ লাখ রোগী চিকিৎসা নেয়। বাকি ৭১ লাখ রোগী রয়ে যায় চিকিৎসার বাইরে, মূলত অর্থাভাবে।

এভাবে লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তাহলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৬ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহে যান চলাচল শুরু

ওষুধের দাম বেড়েছে

ওমরাহ পালন করতে মক্কায় জনপ্রিয় অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান

সোনায় অ্যালার্জি বুঝবেন কীভাবে, কী করবেন

সুদানে আরএসএফের হামলায় নিহত অন্তত ৩০

৮৩তম জন্মদিনে অমিতাভকে শুভেচ্ছা জানালেন মমতা ব্যানার্জি