স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, মো. কামরুজ্জামান সাবেক চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সহযোগিতায় ২০১১ সালের তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিচালনা কমিটির একাংশের সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট বিরোধের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সভাপতির পক্ষের সন্ত্রাসীরা দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মোকতার আহমেদ চৌধুরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে পাঁচ দিন পর্যন্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে গত ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে নির্বাচনি পরীক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ শ্রেণি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
তারা আরও জানায়, ওই সময় তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক থাকায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আন্দোলন দমন করে ১০ অক্টোবর প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এতে বিদ্যালয় এবং আমাদের এলাকার সুনাম ক্ষুন্ণ হয়েছে। আমরা চাই তদন্তপূর্বক দুর্নীতিবাজ ও অর্থলোপাটকারী কামরুজ্জামানে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক। যাতে ভবিষ্যতের দেশের কোন শিক্ষক স্কুল ফান্ডের টাকা আত্মসাতের সাহস না পায়।
আরও পড়ুনএ বিষয়ে অভিযুক্ত তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। স্কুল কমিটি অর্থনৈতিক যে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে তা প্রমাণ করতে পারবে না। তা ছাড়া এই কমিটির কোনো বৈধতা নেই। তারা কিভাবে অডিট করল? অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি আইনগত মোকাবিলা করব।
সভাপতিকে না জানিয়ে নিজেই নিজের বিদায় অনুষ্ঠানে আয়োজন কিভাবে করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহআলম সাহেবকে (সভাপতি) জানিয়েই এই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। আমার একা মতে নয়।
২০১৯ সালের স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য আইয়ুব আলী খান বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা বিদ্যালয়ের এক বছরের আয়-ব্যয় হিসাব-নিরীক্ষা করে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৬ টাকার গরমিল পাই। এর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানসহ একাধিক শিক্ষক জড়িত ছিল। পরে কামরুজ্জামান বিদ্যালয় ফান্ডে ১ লাখ টাকা করে ২ কিস্তি জামা দেওয়ার পর আমাদের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর বাকী টাকা দিয়েছেন কি-না আমার জানা নেই।
বর্তমান স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহআলম মজুমদার বলেন, রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। প্রধান শিক্ষকের সার্বিক সহযোগিয়তায় নিরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে অডিট সম্পন্ন হয়। সেখানে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ টাকা গরমিল পাওয়া যায়। সেই রিপোর্ট তাকে দেওয়া হলে তিনি গ্রহণ করেননি। এরপর তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা মর্মে তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে এর জবাব দিতে বলা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানের বিষয়ে অফিসিলি কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, গত রবিবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছে। সভাপতিসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তপূর্বক এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্ত শিক্ষককে অবশ্যই আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।