বগুড়ায় গ্রেফতার ২ জনকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে
কোথায় যাচ্ছিল সাপের বিষ, ক্রেতা কারা?

মাসুদুর রহমান রানা : বগুড়ায় ৪২ কোটি টাকা মূল্যের সাপের বিষ উদ্ধার এবং এ ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও সাপের এই বিষ কোথায় যাচ্ছিল, বিষের ক্রেতা কারা? উদ্ধার হওয়া বিষ আসল না নকল তা এখনও অজানা।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র ওসি মো. ইকবাল বাহার বলেন, উদ্ধার হওয়া সাপের বিষ আসল না নকল তা নিয়ে সন্দেহ তাদেরও রয়েছে। তাই এই বিষ আসল না নকল তা পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। সেইসাথে সাপের বিষ চোরাচালান চক্রের সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত দু’জনকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে আগামীকাল।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ডিবি পুলিশের একটি টিম শহরের ঠনঠনিয়া শহীদ নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাপের বিষ কারবারি চক্রের ওই দু’জনকে গ্রেফতার এবং তাদের হেফাজত থেকে একটি বড় কার্টুনভর্তি পাঁচটি কাঁচের জারে রাখা সাপের বিষ উদ্ধার করে। স্মরণকালের মধ্যে বগুড়ায় সাপের বিষ উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম। এ ঘটনায় থানায় ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে সাপের বিষ চোরা চালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ওই মামলায় উদ্ধার করা বিষকে কথিত বিষ বলে উল্লেখ এবং সেইসাথে এর দাম ৪২ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া মন্ডলপাড়ার আব্দুল মজিদের ছেলে এস.এম.এ ফেরদৌস (৭৪) এবং সূত্রাপুর গোহাইল গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে রমজান আলী (৫৫)। বর্তমানে তারা জেলা কারাগারে রয়েছে।
ডিবি বগুড়ার ওসি জানান, ওই দিন গ্রেফতারের পর ডিবি কার্যালয়ে এই দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি নিষিদ্ধ ও মহামূল্যবান সাপের বিষ চোরাচালান করে আসছিল। তারা দাবি করেছে উদ্ধার হওয়া বিষ আসল। এর দাম ৪২ কোটি টাকা। দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিষ সংগ্রহ করে দেশে এনে তারা গোপনে বিক্রি করতো।
তারা একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে এবং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে ডিবির অভিযান চলমান রয়েছে। তবে সাপের বিষ কোথায় যাচ্ছিল, ক্রেতা কারা? গডফাদার কে? আরও কে, কে, জড়িত আছে এই চক্রে? সে বিষয় এখনও অজানা। অভিযুক্ত ফেরদৌস ও রমজান ফ্রান্স থেকে অবৈধভাবে এসব সাপের বিষ দেশে এনে ভারতীয় সীমান্তে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে তারা স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুনতবে তাদের গড ফাদার কে এবং তাদের নেটওর্য়াক কতদূর বিস্তৃত সে বিষয়ে তারা মুখ খোলেনি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তাদের রিমান্ডে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসি বলেন, উদ্ধারকৃত ৫টি কাঁচের জারসহ বিষের ওজন ৬ হাজার ৭শ’গ্রাম। ওই সব কাঁচের জারের গায়ে লেবেলে লেখা ছিল কোবরা রেড ড্রাগন কোম্পানী, মেড ইন ফ্রান্স।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোনার থেকেও দামি হলো সাপের বিষ। সাপের বিষের চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ ফুলে ফেঁপে উঠছে সিন্ডিকেটের অবৈধ ব্যবসা৷ সাপের বিষের ব্যবসা অসম্ভব লাভজনক৷ কোটি কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরেও৷ এ মুহূর্তে এক লিটার সাপের বিষের বাজার দাম প্রায় চার কোটি টাকা বলে জানা গেছে৷
কর্মকর্তারা বলেন, বিষ নিষ্কাশনের জন্য ধরা হয় প্রধানত চার প্রজাতির সাপ–কোবরা বা গোখরো, রাসেল ভাইপার, পিট ভাইপার এবং শাখামুটে৷ বিষ নিষ্কাশনের পর সেই বিষ চালান করা হয় দেশে এবং বিদেশে৷ দেশে চোরা চালানকারীদের সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক ব্যাপক। কিন্তু সব সময় তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সাপের বিষ দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলি তৈরি করে অ্যান্টি-ভেনাম সিরাম৷ এটা সাপে কাটা মানুষের জীবনদায়ী ওষুধের পাশাপাশি গবেষণার কাজেও ব্যবহার করা হয় সাপের বিষ।
মন্তব্য করুন