বগুড়া-মহিমাগঞ্জ ৭১ কিমি রেলপথে ৩৬টি অরক্ষিত লেভেলক্রসিং যেন মৃত্যুফাঁদ
স্টাফ রিপোর্টার : রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বগুড়ার সান্তাহার থেকে গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭১ কিলোমিটার রেলপথে ৬৪টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৩৬টিই অরক্ষিত। এই ক্রসিংগুলোতে নেই কোন গেটম্যান। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ। এসব রেলক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু এ অঞ্চলেই নয়, সারাদেশে লেভেল ক্রসিংগুলোর (বৈধ-অবৈধ) অধিকাংশই অরক্ষিত। আর এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। অথচ এসব ক্রসিং নিরাপদ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকারে নেই। বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে মৃত্যুর দায় এ পর্যন্ত রেল নিয়েছে বা ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পেয়েছে তার কোনো উদাহরণও নেই।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর (কার্য) কার্যালয় বগুড়া সূত্র জানায়, সান্তাহার থেকে মহিমাগঞ্জ পর্যন্ত ৭১.৪শ’ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে আদমদিঘীর উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকায় দু’টি, ছাতিয়ান এলাকায় একটি, নশরতপুরে একটি ও আলতাফ নগরে দু’টি, দুপচাঁচিয়ার উপজেলার তালোড়া এলাকায় তিনটি, কাহালু উপজেলার দুর্গাপুরে দু’টি, কাহালু পৌর এলাকায় তিনটি, কাহালু ইউনিয়নে একটি, মুরইলে দু’টি, বগুড়া সদরের ফাঁপোড়ে দু’টি, বগুড়া পৌর এলাকায় তিনটি, গাবতলী উপজেলায় তিনটি, নারুয়ামালা এলাকায় একটি, সোনাতলা উপজেলায় দিকদার এলাকায় তিনটি, জোড়গাছায় একটি, চামুরপাড়ায় তিনটি এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা এলাকায় তিনটি রেল ক্রসিংয়ে কোন গেটম্যান নেই।
সূত্র জানায়, রেল আর সড়কের এই সংযোগস্থলকেই লেভেল ক্রসিং বলা হয়। এগুলোকে বৈধ-অবৈধ, পাহারাদার আছে (ম্যানড), পাহারাদার নেই (আনম্যানড)-এভাবে শ্রেণি বিন্যাস করে রেল কর্তৃপক্ষ। যেসব ক্রসিংয়ে গেটম্যান (পাহারাদার) আছেন, সেগুলোতে লোহার প্রতিবন্ধক থাকে। গেটম্যান ট্রেন আসার সংকেত পেয়ে প্রতিবন্ধক নামিয়ে অন্য যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে গেটম্যান ভুল না করলে যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক থাকা রেলক্রসিংয়ে তাই দুর্ঘটনাও খুব কম। পাহারাদার নেই এমন ক্রসিং অরক্ষিত। তাই বিপুলসংখ্যক রেলক্রসিং অরক্ষিতই রয়ে গেছে। সূত্র আরও জানায়, ট্রেন চলাচলের সংখ্যা হিসেবে লেভেল ক্রসিংয়ে এক থেকে চারজন গেটম্যান থাকেন। আট ঘণ্টার শিফট হিসেবে ক্রসিংয়ের ৩ থেকে ১২ জন গেটম্যান প্রয়োজন হয়।
এদিকে, রেলওয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারাদেশে রেলপথে মোট ক্রসিং আছে ২ হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই। আবার ১ হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টি ক্রসিংয়েই গেটম্যান নেই।
স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, রেলক্রসিং অরক্ষিত থাকার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলওয়ের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোর দুর্ঘটনা রোধকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এ কারণে প্রতি বছর সারাদেশে ট্রেনে কাটা পড়ে ও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। স্থানীয়রা রেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার দাবি জানান।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে রেলপথ আছে ২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের হিসাবে, পূর্ব ও পশ্চিম রেলের দুই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেল ক্রসিং সৃষ্টি করেছে এলজিইডি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ এবং সওজ লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করেছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়েও লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধভাবে।
রেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, নতুন রেললাইন তৈরি করে প্রথম ট্রেন চালানোর ১০ বছরের মধ্যে এর ওপর দিয়ে কোনো সড়ক গেলে তা সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব রেলের। এরপর কোনো সড়ক নির্মাণ হলে তা আগে রেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। সড়কের কারণে তৈরি রেলক্রসিংয়ে পথরোধক ও পাহারাদার দিয়ে তা সুরক্ষণ করার দায়িত্ব সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার।
রেলওয়ের বগুড়ার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আসলাম হুসাইন বলেন, রেললাইনের ওপর দিয়ে মূলত পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথের রাস্তা গেছে। যেখানে, যেখানে লাইন আছে, ব্যয়সাপেক্ষ হলেও সেখানে উড়াল সড়ক তৈরি করা যেতে পারে। তাতে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে। সেইসাথে এসব লেভেলক্রসিং ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। রেলওয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের ভেতর দিয়ে লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, যে সকল অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে সেসব লেভেল ক্রসিং নিজ দায়িত্বে পারাপার হতে হবে। সাবধান বাণী হিসাবে ওইসব লেভেল ক্রসিং এলাকায় রেল লাইনের সামনে ‘নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন’ লেখা সম্বলিত বোর্ড স্থাপন করা আছে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, কোন সংস্থা বৈধ গেইট নির্মাণ করতে চাইলে রেলওয়ের কাছে গেইট নির্মাণের খরচ এবং আগামী ১৫ বছর গেইট পরিচালনার তিনজন গেইটম্যানের ১৫ বছরের বেতনসহ সর্বমোট টাকা জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এই টাকা জমা দিয়ে বৈধ গেইট নির্মাণ করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক






_medium_1764257966.jpg)

