ভিডিও মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০১ রাত

ছাত্রীদের আবাসিকসহ রয়েছে নানা সংকট

সরকারি আ.হ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে

সরকারি আ.হ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। ছবি : দৈনিক করতোয়া

নাসিমা সুলতানা ছুটু : অবকাঠামোগত নানা সংকট নিয়েই চলছে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ভবন। যা বগুড়াবাসীর কাছে পুরাতন ভবন নামেও পরিচিত। কলেজের ওই ভবনের দক্ষিণ পাশে নির্মিত টিনশেড বিশিষ্ট চারটি কক্ষ বেশ কয়েক বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় চুরাশি বছর আগে নির্মিত কলেজের উত্তর পাশের নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও সেখানেই মানবিক বিভাগের পাঠদান চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনেই  রয়েছে অফিস কক্ষ এবং শিক্ষকদের কক্ষ।

ব্রিটিশ আমলে অর্থাৎ ১৯৪১ সালে নির্মিত হয়েছে উত্তরবঙ্গের সেরা এই বিদ্যাপীঠের ওই ভবনে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোনো অডিটোরিয়াম, ছাত্রদের কমনরুম, ওয়াশরুম এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল। দীর্ঘদিন থেকে বিজ্ঞানাগারের কক্ষগুলো ব্যবহারের অযোগ্য থাকার পর সম্প্রতি সেগুলো সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাস করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, লেখক ও আইনজীবী স্যার আজিজুল হকের নামে বগুড়ায় শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠদানের জন্য আজিজুল হক কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১৯৩৮ সালের এপ্রিল মাসে বগুড়ায় কলেজটি করার লক্ষ্যে খাঁন বাহাদুর মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি এবং মৌলভী আব্দুস সাত্তারকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটির নেতৃত্বেই শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বর্তমানে সুবিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ড. এম এম মুখার্জিকে অধ্যক্ষ করে কলেজে পাঠদান শুরু হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আজিজুল হক কলেজে প্রথম ব্যাচে ২শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। এর দুই বছর পর ১৯৪১ ফুলবাড়ির বটতলায় ১৬ বিঘা জমি নিয়ে কলেজের উত্তর ও পূর্বপাশে একতলা ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৪৩ সালে। এছাড়া দক্ষিণ পাশে ক্লাস করানোর জন্য টিনের একচালা চারটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়।

পরবর্তীতে ৬০, ৭০ এবং ৯০ এর দশকে কয়েক দফা কলেজের সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া কলেজের পূর্বপাশে দশ কক্ষবিশিষ্ট একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হলেও শিক্ষার্থীর তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। বর্তমানে উত্তর ও পূর্ব পাশের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় খুবই শঙ্কার মধ্যেই পাঠদান চলছে। কলেজটি যাত্রার শুরুতে নারী শিক্ষার্থী ভর্তি না হলেও পাঁচ বছর পর ১৯৪৩ সালে ৮ থেকে ১২জন নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হন। প্রথম কয়েক বছর ওই কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের তৎকালীন ভিএম স্কুলে (বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে) সকালের শিফটে পাঠদান করানো হতো।

বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই নারী শিক্ষার্থী। সূত্র জানিয়েছে এবার প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৫৩ জন ছাত্র এবং ৭৭৮ জন ছাত্রী। ছাত্রীদের একটি বড় অংশই বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ও আশে-পাশের জেলাগুলো থেকে আসা। আবাসিক সুবিধা না থাকায় তারা কলেজের আশে-পাশের মেসে থাকেন।

আরও পড়ুন

অনেক নারী শিক্ষার্থীর জন্যই মা অথবা পরিবারের অন্য কাউকে শহরে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। ওই কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাশ করা নূপুর দেব নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তার বাড়ি শেরপুরে। আবাসিক সুবিধা না থাকায় প্রতিদিন এসে ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে তার মা বগুড়া শহরে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন।

ওই ভবনের ইনচার্জ অধ্যাপক মো: শামসুল আলম জানান, ২০২০ সাল থেকে ওই কলেজের নতুন নির্মিত ৫তলা ভবনে পাঠদান চলছে। নতুন নির্মিত ওই ভবনে মোট দশটি কক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে ৫তলার দুটি কক্ষ আইসিটি’র ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাকি ৮টি কক্ষে বিজ্ঞান ও ব্যবসায়িক শিক্ষা বিভাগের একাদশ ও দ্বাদশের ক্লাস করানো হয়। মানবিক শাখার ক্লাসগুলো পলেস্তার উঠা এবং ছাদের পুরুত্ব ক্ষয়ে যাওয়া উত্তরপাশের পুরাতন ভবনেই চলছে। এছাড়া অফিস শিক্ষকদের কক্ষও একই স্থানে রয়েছে। পূর্বপাশে ছাত্রীদের একটি টিনশেড কমনরুম ছিলো।

ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ায় কয়েক বছর আগে সেটি সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া একই পাশে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কক্ষগুলো ৭টি বিষয়ের বিজ্ঞানাগার হিসেবে ব্যবহার হলেও সেগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যাওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে সেগুলো সংস্কার কাজ শুরু করেছে।

অধ্যাপক শামসুল আলম আরও বলেন, কলেজে অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে শ্রেণি সংকটের পাশাপাশি লাইব্রেরী, অডিটোরিয়াম, ছাত্রদের কমনরুম, ওয়াশরুম এবং ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হলেরও প্রয়োজন রয়েছে। দক্ষিণ পাশের টিনশেড বিশিষ্ট কক্ষগুলো অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আমরা দক্ষিণ পাশে আরও একটি ভবন নির্মানের প্রস্তবনা দিয়েছি। দক্ষিণ পাশে ওই ভবনটি নির্মিত হলে আপাতত: শ্রেণিকক্ষের সংকট দুর হবে। যেহেতু এই কলেজটি শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য তাই খুব বেশি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হবে না।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: মাহফুজুল ইসলামের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, তিনি মাত্র ক’দিন আগেই এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। ওই ভবনে শ্রেণি সংকটের বিষয়টি জেনেছেন এবং শিক্ষা প্রকৌশলে আবেদন করা হয়েছে সেই বিষয়েও তিনি অবগত রয়েছেন। তনি আরও বলেন, সরকারের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে দেশের সকল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা, সেটি যদি হয় তবে আজিজুল হক কলেজের পুরানো ভবনেরও উন্নয়ন হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসির ১২ কর্মকর্তাকে বদলি

সরকারি আ.হ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে

দিনাজপুরের বিরামপুরে রাস্তায় আলু ফেলে কৃষকদের মানববন্ধন

আইজিপির সঙ্গে আইসিআরসি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

ধানমন্ডি অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ককটেল বি'স্ফো'রণ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার