ভিডিও বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

বিশ্ববাজারে কমলো স্বর্ণের দাম

বিশ্ববাজারে কমলো স্বর্ণের দাম

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দিনের শুরুতে নিউ ইয়র্কের বাজারে স্বর্ণের দাম ০.৩৩ শতাংশ কমেছে, যা তিন সপ্তাহের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৯৯০ ডলার।

গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, সব মিলিয়ে গত এক সপ্তাহে সোনার দাম ৮ শতাংশের বেশি কমেছে। ২০১৩ সালের পর আর কোনো সপ্তাহে স্বর্ণের দাম এতটা কমেনি। সোনার দামের যে ঊর্ধ্বগতি চলতি বছরে শুরু হয়েছিল, বছরের শেষভাগে এসে সেই ধারায় ছন্দপতন ঘটেছে।

 

ইকোনমিক টাইমস এর প্রতিবেদন অনুযায়ী,ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ও মার্কিন ডলারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সোনার কদর বেড়ে যায়। এর আগে করোনা মহামারির সময়ও এমন গোল্ড রাশ বা সোনার মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। এরপর ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়তে থাকলে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু গত দুই বছরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম আবারও মানুষ স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। 

কিন্তু এখন বাজারের মানসিকতা পাল্টে গেছে। মার্কিন ডলারের শক্তিশালী হওয়া ও যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। ডলার সূচক বা ডলার ইনডেক্স ১০৬-এর ওপরে উঠে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সোনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের চাহিদা কমেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশাপাশি শেয়ার ও বন্ডবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। ফলে এ বছরের শুরুতে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার প্রতি যে প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল, এখন তাতে স্পষ্ট ভাটা পড়ছে।

প্রযুক্তিগত কারণেও স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করেছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এখন সোনার দামের আদর্শ মানদণ্ড হলো প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ৫০ থেকে ৪ হাজার ডলার। দাম এই সীমার নিচে নেমে গেলে তা আরও বড় পতনের পথ খুলে দিতে পারে—দাম নেমে যেতে পারে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সোনার দাম এই সীমার ওপরে থাকলে বাজারে বড় কোনো পরিবর্তনের আগে কিছুদিন তা স্থিতিশীল থাকবে বা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করবে।

যারা স্বর্ণের দামের উত্থানের শেষ দিকে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তাদের অনেকেই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ মুনাফা তুলে নিচ্ছেন, কেউ আবার ডলারভিত্তিক সম্পদে ফিরছেন, অর্থাৎ বন্ডে বিনিয়োগ করছেন।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্ক আশাবাদ ধরে রেখেছেন। তাঁদের মতে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, ২০২৬ সালে সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিকভাবে সোনা কেনা—এসবই সোনার বাজার স্থিতিশীল রাখার পক্ষে কাজ করছে।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং মার্কিন ডলার শক্তিশালী থাকলে স্বল্প মেয়াদে সোনার দাম আরও কিছুটা কমতে পারে। তবে নতুন করে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিলে বা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে বিনিয়োগকারীরা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে আবারও সোনার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন, এমন সম্ভাবনা আছে।

এ মুহূর্তে বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত একটাই। সেটা হলো টানা কয়েক মাসের  ঊর্ধ্বগতির সোনার দৌড় আপাতত গতি হারিয়েছে। তার মানে এই নয়, সোনার বাজার আবার চাঙা হবে না।

সোনার দাম কত কমলো

সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাম্প্রতিক দরপতনের পরও ২০২৬ সালে সোনার বাজারে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকতে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময় নাগাদ সোনার দাম প্রায় ৬ শতাংশ বাড়তে পারে। প্রথমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ডলার এবং পরে তা বেড়ে প্রায় ৪ হাজার ৪৪০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।

এদিকে বিশ্ববাজারে সোনার দামের ওঠানামার ওপর ভর করে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো–কমানো হয়। ২২ অক্টোবর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রংপুরে মাকে হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের ঐতিহাসিক পল্টন ট্রাজেডি দিবস পালন

বগুড়ার নন্দীগ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন সোহেলের মানবেতর জীবন

শর্ত সাপেক্ষ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে এনসিপি- রাজশাহীতে নাহিদ

জামায়াত সরকার গঠন করলে সাংবাদিক ভাইদের বিশেষ সহায়তার আওতায় আনা হবে : অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন

রংপুরে স্বল্প সময়ে ভালো ফলনের জন্য বিনাধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের