তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২ কোটি মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হবে : করতোয়াকে আসাদুল হাবিব দুলু

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২ কোটি মানুষের সামগ্রিক জীবনমান পরিবর্তন হবে। সেইসাথে রংপুরের চিত্র পাল্টেও যাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক (রংপুর বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত) সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। তবে এনিয়ে তিনি বলেন, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের গড়িমসি আমরা লক্ষ্য করছি। আসাদুল হাবিব গত রোববার সকালে রাজধানীর বনানী নিজ বাসায় করতোয়ার সঙ্গে মুখোমুখি হন।
জাতীয় নির্বাচন, রংপুর বিভাগে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত, সবুজ সংকেত বিষয়টিসহ তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএনপির আগামীর পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। আসাদুল হাবিব সাবেক উপমন্ত্রী ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন-এর অন্যতম সমন্বয়ক। তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নেন করতোয়ার প্রতিবেদক ইসহাক আসিফ।
করতোয়া: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির আগামী পরিকল্পনা কতটুকু?
আসাদুল হাবিব দুলু: তিস্তা নদীর কারণে বিধ্বস্ত রূপ ধারণ করেছে। এই নদীর পাড়ে ৫টি জেলা এবং প্রায় ২ কোটি মানুষ রয়েছে। বর্ষাকালে বিনা কারণে লাখ লাখ মানুষের বাড়ি ভেসে যায়। আর শুকনা মৌসুমে ধূ ধূ বালু চরে পরিণত হয়।
এটা নিয়ে দীর্ঘদিন আমরা ‘তিস্তা নদী রক্ষা’ ব্যানারে আন্দোলন করছি। তিস্তার মহাপরিকল্পনার কথা সবাই জানে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমল থেকে আলোচনা হচ্ছিল। তারা আশ্বাস দিয়েছিল রংপুরবাসীর এটা (মহাপরিকল্পনা) শিগগিরই পাস হবে।
এখন কি কারণে এই কাজটা তারা করেনি। আমরা গত ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা রংপুরের ১১টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত হয়েছিল।
সর্বোপরি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়েছিলন। তিনি বলেছিলেন আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও গণশুনানি করেছেন। তিস্তাপাড়ে গিয়েছিলেন। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও বলেছেন তিস্তাপাড়ের লোক দাবি করে তাহলে আমরা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।
কিন্তু এই সরকারের গড়িমসি আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা আবারও কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছি। ১৬ অক্টোবর (আজ) তিস্তাপাড়ের ১৩০ কিলোমিটারব্যাপী আমরা মশাল প্রজ্বলন করব। কারণ এটি (মহাপরিকল্পনা) বাস্তবায়ন হলে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
তিস্তার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরে আসবে। লাখ লাখ হেক্টর জমি আবাদি হবে। পর্যটন নগরী হিসেবে এই অঞ্চল পরিগণিত হবে। সর্বোপরি মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প নগরী তৈরি হবে। এই একটা পরিকল্পনার মাধ্যমে রংপুরের চিত্র পরিবর্তন হয়ে যাবে। এরজন্য আমরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
করতোয়া: সাংগঠনিকভাবে রংপুর বিভাগকে কিভাবে দেখছেন?
আসাদুল হাবিব দুলু: এখানে আমরা অত্যন্ত শক্তিশালী। এখন মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপিকেই সমর্থন করে। বিগত ১৭ বছর এই বিভাগে আমরা যে সংগ্রাম আন্দোলন করেছি সেখান থেকে মানুষ আস্থা অর্জন করেছেÑযে বিএনপির একমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে। এই দল একাধিকবার রাষ্ট্রপরিচালনায় দায়িত্ব পেয়েছিল। সবদিক বিবেচনা করে আমরা রংপুর বিভাগে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করব।
আরও পড়ুনকরতোয়া: বিভাগের ৮ জেলার অনেক ইউনিটের কমিটি পুরনো। আবার অনেক ইউনিটের কমিটি নেই। নির্বাচনে কি-এর প্রভাব পড়বে?
আসাদুল হাবিব দুলু: কমিটি ছাড়া আমাদের কোন ইউনিট নেই। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভার এবং জেলা সম্মেলন হয়। ইতিমধ্যে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চগড় আমাদের পুরো রেডি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) ব্যস্ত থাকায় এবং মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম) দেশের বাইরে যাওয়ার কারণে তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। রংপুর মহানগরও রেডি হয়েছে।
করতোয়া: এক আসনে ৫-১০ জনও প্রার্থী আছে। একজন পেলে বাকিদের থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হবে কি? হলে তাদের জন্য সাংগঠনিক কি শাস্তি হতে পারে?
আসাদুল হাবিব দুলু: বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ দল। স্বাভাবিক কারণে একটি আসনে ৫ জন কেন ১০-১২ জনও থাকতে পারে। দল যাচাই-বাছাই করে যাকে যোগ্য মনে করে তাকেই প্রার্থী দেবে। সুতরাং যাকে প্রার্থী দেওয়া হবে তার পক্ষেই অন্যদের কাজ করতে হবে। আর যদি কোথাও কেউ এর ব্যতিক্রম করেন তার বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।
করতোয়া: রংপুর বিভাগে নির্বাচনী কার্যক্রম কতটুকু বলে মনে করেন?
আসাদুল হাবিব দুলু: এখনও নির্বাচনের তফসিল দেওয়া হয়নি। আর দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে যারা নির্বাচনমুখী, নির্বাচন করতে চায়, যাদের ভিতরে আকাক্সক্ষা আছে। তারা জনসম্পৃক্তমূলক কাজ করছেন। আমাদের ৩১-দফা নিয়ে আলোচনা করছেন। বিভিন্ন উঠান ও খুলি বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া সামাজিক আন্দোলনগুলোয় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মানবিক কাজ করছেন। এটাই অব্যাহত থাকবে। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়। সেটির ওপর লক্ষ্য রেখে আমরা নির্বাচনী কার্য?ম চালাব।
করতোয়া: ৮ জেলার ঐতিহাসিক বিজয় থাকছে কি?
আসাদুল হাবিব দুলু: আমাদের বিভাগে ৩৩টি আসন রয়েছে। আমরা আশা করছি প্রতিটি আসনে খুবই ভালো ফলাফল হবে। এই অঞ্চলের মানুষের যে আবেগ ছিল পতিত সরকারের দোসর ছিল যারা, তাদের প্রতি মোহ কেটে গেছে। ফ্যাসিস্ট আমলে নির্বাচনগুলোও সুষ্ঠু হয়নি। একটা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলামÑযেটা দিনের ভোট রাতে হয়ে গেল। এবার রংপুরের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আমরা খুবই ভালো ফলাফল করব।
করতোয়া: তরুণদের কিভাবে দেখছেন?
আসাদুল হাবিব দুলু: তরুণেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা স্মার্ট ও বুদ্ধিদীপ্ত। তাদের ভাবনাকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তারুণ্য ভিত্তিক একটা রাষ্ট্র গঠন করতে পারলে সেটা এগিয়ে যাবে। আমি মনে করি প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও তরুণের উদ্যোম এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
মন্তব্য করুন