সর্বপ্রথম কোথায় আজান হয়েছিল?

মহানবীর (সা.) জীবনীকার, ইতিহাসবিদ ও আলেমদের নির্ভরযোগ্য অভিমত অনুযায়ী সর্বপ্রথম আজান হয়েছিল মদিনায় আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর প্রথম বছর অর্থাৎ প্রথম হিজরিতে। হজরত বেলালই (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি আজান দেন।
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মুসলমানরা যখন হিজরত করে মদিনায় হিজরত করেন, তখন তারা অনুমান করে নামাজেরর জন্য একটা সময় ঠিক করে নিতেন এবং সে অনুসারে সমবেত হতেন। নামাজের জন্য কেউ আজান দিত না। একদিন তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন, নামাজের আগে খৃষ্টানদের মত ঘন্টা বাজানো হোক।
কেউ আবার বললেন, ইহুদিদের মত ভেঁপু বাজানো হোক। ওমর (রা.) বললেন, নামাজের জন্য ডাকতে তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না? তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে বেলাল! নামাজের ঘোষণা দাও! (সুনানে তিরমিজি: ১৯০)
আবদুল্লাহ ইবনু যায়েদ ইবনে আবদে রব্বিহি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজে একত্রিত হওয়ার জন্য ঘণ্টা বাজানোর নির্দেশ দিলেন। সেদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম, এক লোক একটি ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি এ ঘণ্টাটা বিক্রি করবে? সে বললো, তুমি এ ঘণ্টা দিয়ে কী করবে? আমি বললাম, আমরা এ ঘণ্টা বাজিয়ে মানুষকে নামাজের জামাতে ডাকব। ওই ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পন্থা বলে দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই, তখন সে আমাকে আজানের সবগুলো বাক্য শোনাল। ইকামতের সবগুলো বাক্যও শোনাল।
ভোরে উঠে আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে বর্ণনা করলাম স্বপ্নে যা দেখেছি। তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ, এ স্বপ্ন সত্য। এখন তুমি স্বপ্নে যা দেখেছ বেলালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে থাক আর সে আযান দিতে থাকুক। কারণ তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে জোরালো।
নবীজির (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী আমি বেলালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে লাগলাম আর তিনি আজান দিতে থাকলেন। ওমর (রা.) নিজের বাড়ি থেকে আজানের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি নিজের চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে এলেন। নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরবারে উপস্থিত হয়ে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসুল! সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি।
আরও পড়ুনরাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯)
এই দুটি হাদিস থেকে বোঝা যায়, মদিনায় বেলাল (রা.) প্রথম আজান দেন। এর আগে মহানবী (সা.) ও তার সাহাবিরা আজানের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। এ ছাড়া কারো কারো মতে প্রথম আজান দেওয়া হয়েছিল মক্কায়, কারো কারো মতে মহানবীর (সা.) মিরাজের সময়, অনেকে বলেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তার সময়ে প্রথম আজান দেন, অনেকে আবার বলেছেন, প্রথম মানুষ হজরত আদমই (আ.) তার সময়ে প্রথম আজান দেন‒এই অভিমতগুলোর ভিত্তি দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেওয়ার বিধান
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য পাঁচবার মসজিদ থেকে আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ কোনো মহল্লার মসজিদে আজান না হলে বা কেউ আজান না দিলে সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার জন্য সবাই গুনাহগার হবে। মসজিদ ছাড়া বাড়িতে বা অন্য কোথাও একা বা জামাতে নামাজ পড়লে আজান দেওয়া মুস্তাহাব।
নামাজের ঘোষণার প্রয়োজন ছাড়া আজান
ইসলামে আজান মূলত নামাজের ঘোষণা। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের ঘোষণার জন্যই আজানের প্রচলন হয়েছিল এবং মহানবীর (সা.) যুগে সাধারণত সে উদ্দেশ্যেই আজান দেওয়া হত। মহানবীর (সা.) যুগে নামাজ ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে মানুষকে সমবেত করার জন্য আজান দেওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। তবে হাদিসে নামাজ বা অন্য কোনো কাজের ঘোষণা ছাড়া দুই ক্ষেত্রে আজান দেওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায়:
১. শিশুর জন্মের পর তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেওয়া। আবু রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহনবীর নাতি হাসানের (রা.) জন্মের পর আমি রাসুলকে (সা.) তার কানে আজান দিতে দেখেছি। (সুনানে তিরমিজি: ১৫১৪)
২. কারো ওপর জিনের আসর হলে আজান দেওয়া। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের ওপর জিনের প্রভাব বা বদ-আসর পড়ে, তাহলে তোমরা আজান দাও। শয়তান আজান শুনলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। (তাবরানি: ৭৪৩৬)
মন্তব্য করুন