সোনা পাচার চক্রের দৌরাত্ম্য

প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো বিমানবন্দর কিংম্বা স্থল বন্দরে সোনা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। এতে চোরাচালানিরা ধরা পড়ছে আবার কখনও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী চোরাচালানির বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে একদিনে দুটি পৃথক ঘটনায় ৩ কোটি রুপি মূল্যের সোনা উদ্ধার করেছে বিএসএফ গ্রেফতার করা হয়েছে এক ভারতীয় পাচারকারীকেও। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমান্তে পেট্রোপোল স্থলবন্দরে ট্রাক চেকিংয়ের সময় ১ দশমিক ২৭ কোটি রুপি মূল্যের সোনা উদ্ধার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুবাই থেকে আসা এক যাত্রীর অন্তর্বাসসহ আটটি পোশাকে দেড় কেজি গলিত সোনা পাওয়ার কথা জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার সকালে দুবাই থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৪৮ নম্বর ফ্লাইটে আসা ওই যাত্রীকে তল্লাশি করে এসব পাওয়া যায় বলে জানান সিলেট কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ইনজামাল উল হক। আটক আলীম উদ্দিন (৪০) সিলেটের গোয়াইন ঘাট উপজেলার বাসিন্দা।
দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলো আন্তর্জাতিক চোরাচালানের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভৌগলিক দিক থেকে দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেকপোস্ট বেনাপোল স্থলবন্দরের চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। বেনাপোল হয়ে ঢাকা-কলকাতা রুটে কম খরচে এবং অল্প সময়ে যাতায়াত করেন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার যাত্রী। সোনা চোরাচালানের আন্তর্জাতিক চক্রটিই এ সুযোগ কাজে লাগায়। সোনা চোরাচালানের রয়েছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে অনেক সময়ে বন্দরে কর্মরতদের যোগসাজসের প্রমাণও পাওয়া যায়।
বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জেলহাজত থেকে বের হয়ে তারা ফের অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যায়। দেশের সবচেয়ে বড়চোরাচালানের মাধ্যম রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। বস্তত শাহজালাল বিমানবন্দরে সোনার চালান আটক হওয়ার ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন পরপরই এখানে বিপুল পরিমাণ সোনার চালান আটকের ঘটনা ঘটছে।
আরও পড়ুনপাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকেও বেশ কয়েকটি বড় ধরনের সোনার চালান আটক করা হয়েছে। এর বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কী পরিমাণ সোনা পাচার হচ্ছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বলা যায়, এর পরিমাণও কম হবে না। এসব সোনার চালান কোথায় যায়, কী কাজে লাগে- সে তথ্য উদঘাটন হওয়া জরুরি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা- বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানের ঘটনার সময়ে যাদের আটক করা হয়, তারা কেবল বাহকমাত্র। মূলত এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে দেশী-বিদেশি পাচারকারী মাফিয়া চক্র। শাহ জালাল বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি চক্র সোনা পাচারে নিয়োজিত রয়েছে। এসব চক্রের হোতারা মূলত হংকং, দুবাই ও মালয়েশিয়া থেকে সোনা আনছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া একটি শক্তিশালী চক্র লাগেজ ব্যবসার আড়ালে সোনা, রূপা, মাদক ও মুদ্রাসহ নানা রকম দ্রব্য পাচার করছে। অবৈধ এ লাগেজ ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে বিমানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারিও।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, চোরাচারকারিরা টার্গেট গন্তব্যে সোনার চালান পৌছে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্লেন চেপে বাহক অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এরপর চার থেকে পাঁচবার হাতবদল। এভাবেই বাংলাদেশ হয়ে চোরা সোনা চোরাই পথে চলে যায় পাশের দেশ ভারতে। দেশের সীমান্ত এলাকায় ২০১৯ সালে এক বছরে পাচারের সময় জব্দ করা হয়েছিল ৫৪ কেজি সোনা। আর ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসেই ধরা পড়ে ১৪২ কেজি ৮১৫ গ্রাম।
এটা আমলে নেওয়া সমীচীন যে, যারা সোনার চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তারা রাতারাতি ধনী হতে চায় এবং তারা দেশ ও জাতির শত্রু। কেননা, এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। দেশ থেকে চোরাচালান একেবারেই বন্ধ হোক- এমনটি কাম্য।
মন্তব্য করুন