চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি, ঝরে গেছে প্রচুর গুটি আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার পর থেকে জোরালো বাতাস বইতে শুরু করে। এরপর রাত সাড়ে ১০ টা অবধি কখনও জোরে আবার কখনও দমকা হাওয়া বয়ে যায়।
প্রথমে শুকনো হাওয়ার পর রাত ৯ টা থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ বর্ষাকালের ন্যায় কখনও মাঝারি আবার কখনও টিপ টিপ করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। এর সাথে কখনও বজ্রপাতের শব্দও শোনা যায়। এর আগে দুপুর ১২ টায় একদফা জোরালো হাওয়া বয়ে যায়। তবে শিলাবৃষ্টির কোনো খবর জেলার কোন স্থান থেকে কৃষি বিভাগ বা স্থানীয় সূত্রে পাওয়া যায়নি।
রাত ও দুপুরের ঝড়ো হাওয়ায় ঝরে গেছে প্রচুর গুটি আম। বিশেষ করে রাতের বাতাসের পর গাছের নিচে চাদরের মত বিছিয়ে পড়ে থাকে আম। এর মধ্যে একমাত্র ফজলি জাতের কিছু আম তরকারি বা চাটনি করে অথবা কাঁচা খাবার যোগ্য হয়েছে। যা গতকাল শুক্রবার ভোরে এমনকি রাতেও বাগান থেকে কুড়িয়ে নিয়ে যায় শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষেরা। যা বাজারেও বিক্রি হয়েছে। এর আগে গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে দীর্ঘ শুস্ক মৌসুম ও খরার পর প্রথম জেলায় গড়ে ২ মি.মি বৃষ্টি রেকর্ড করে কৃষি বিভাগ।
শুকনো ঝড়ো হাওয়ায় এত গুটি আম ঝরে যাওয়ায় কিছু কৃষক উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে কৃষি বিভাগ ও অধিকাংশ কৃষক বলছেন, ঝড়ে আমের গুটি ঝরে যাওয়ার প্রতি মৌসুমের স্বাভাবিক ঘটনা। এটি আশঙ্কার কোন কারণ নয়।
এটি কাঙ্খিত উৎপাদনে কোন প্রভাব ফেলবে না। বরং জেলা ব্যাপি মৌসুমের প্রথম উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিতে আমের জন্য বয়ে আনবে আশীর্বাদ। জেলায় গড়ে ১৫ মি.মি বৃষ্টি রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে সদরে ১০, শিবগঞ্জে ১৫, গোমস্তাপুরে ১০, নাচোলে ১০ এবং ভোলাহাট উপজেলায় ৩০ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির ৮১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪০ টি আম গাছের ৯২ শতাংশে মুকুল আসার পর গুটি বেশ বড় হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১০.৩ মে.টন হিসেবে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৯০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আরও বেশি উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী। এদিকে জেলায় ইরি ধান চাষ কমে হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুনহেক্টর প্রতি ৪.৬৭ টন হিসেবে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৮৯৯.১ টন উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। ধানের দানা শক্ত হয়ে এসেছে। এ মাসের শেষ থেকেই শুরু হবে আগাম ইরি কাটা। অপর দিকে ৩৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আউশ রোপণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষকরা। এখন মাঠে রয়েছে ভুট্টা, মুগ, তিল, হলুদের মত ফসল ও সবজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড: ইয়াছিন আলী বলেন, ঝড়ো বাতাসে প্রচুর আমগুটি ঝরে পড়লেও শিল ছাড়া বৃষ্টি অবশিষ্ট আমের জন্য প্রচুর উপকার বয়ে আনবে। তাপপ্রবাহ এখন কমে আসবে। বাতাসে ও বৃষ্টিতে গাছের পাতা ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে। গাছের গোড়ায় পানি পেয়েছে। এখন গাছের খাদ্য উৎপাদন বাড়বে। আম দ্রুত আকারে বড় হবে।
আম ঝরা কমে যাবে। বোঁটা শক্ত হবে। ইরি ধানের জন্যও বৃষ্টি ভাল হল। পরাগায়নে সুবিধে হল। এছাড়া পাট, তিল বুনতে এখন সুবিধে হবে। তবে মাঠে কারও পেঁয়াজ থাকলে কিছু ক্ষতি হতে পারে। কয়েকদিন আর কোনো ফসলে কোনরুপ বালাইনাশক দিতে হবে না। প্রকৃতির ক্ষতিকারক পোকামাকড় আক্রমণ কমে আসবে।
আম চাষি সদর উপজেলার রামকৃষ্টপুর গ্রামের মো: মন্টু হাজী (৬৩) ও বিদিরপুর গ্রামের বিষু মিয়া (৬০) বলেন, খরায় গুটির গোড়া শুকিয়ে ছিল। ফলে প্রচুর গুটি ঝরে যাচ্ছিল। বাতাসে শুকিয়ে যাওয়া আমের সাথে প্রচুর ভাল আমও ঝরে গেছে। সকালে বাগানে গাছের নিচে বিছিয়ে পড়ে ছিল আম। তবে বৃষ্টি এখন আমের জন্য প্রচুর উপকার বয়ে আনবে।
মন্তব্য করুন