ঘর ছাড়ছেন বাসিন্দারা
মাত্র কয়েক বছরেরই কালাইয়ের নান্দাইল আদর্শ গ্রামের ঘর গুলো ব্যবহারের অনুপোযেগী
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : আওয়ামীলীগ সরকারের সময় গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য করা ঘর ঘরগুলো মাত্র কয়েক বছরেই বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরী ঘরগুলোর বাসিন্ধারা ঘর ছেড়ে যেতে শুরু করেছে।
তৎকালীন সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক ঘরে ৫ থেকে ৬ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। এছাড়াও ঘর করা হলেও ঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা করা হয়নি। কোথাও কোথাও খাল বিল দিঘীর পাড়ে ঘর করা হয়েছে যেখানে বর্ষার পুরো সময় থাকতে হয় পানি বন্দি।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের নান্দাইল আদর্শ গ্রামে পুর্নবাসনের ঘর পেয়েও ছেড়ে গেছেন অধিকাংশ পরিবার। বর্তমানে আদর্শ গ্রাম ছেড়ে ৯টি পরিবার দীঘির পাড়ে স্থানীয় কলেজের পিছনে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
ছেড়ে যাওয়া পরিবার গুলোর অভিযোগ, গত ৬ বছর ধরে বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যা নিয়ে তারা ওই ঘরগুলোতে বসবাস করে আসছেন। সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় ১৪টি পরিবারের মধ্যে ৯টি পরিবার তাদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।
১৪টি ঘরের মধ্যে বর্তমানে ৯টি ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। ২০১৮ সালে নির্মিত ঘরগুলো বাস্তবে বাসযোগ্য ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আদর্শ গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ঘরগুলো ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। নান্দাইল আদর্শ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১৪টি ঘরের মধ্যে ৫টি ঘরে আদর্শ গ্রামের বাসিন্দাদের বসবাস করতে দেখা গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে সব ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে।
নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে ঘরের ভিতরেই আটকে থাকতে হয় দিনের পর দিন। যাতায়াতের কোনো পাকা বা ইট বিছানোর রাস্তা নেই সেখানে। ফলে বর্ষাকালে কাদা ও পানি জমে রাস্তায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া শুরু থেকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। জ¦লে ওঠেনি বিদ্যুৎ বাতি।
আরও পড়ুনআদর্শ গ্রামের অবকাঠামোর বেহাল দশা তাদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে আদর্শ গ্রামে বসবাসরত পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একমি রবিদাস নামে এক ব্যাক্তি বলেন, যারা এখনও এই ঘরগুলোতে বসবাস করছে তারা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। শুধুমাত্র একটি টিনের ঘর দিয়েই সকল সমস্যার সমাধান হয়না।
এখানে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যার কারনে বর্ষা আসলেই ঘরের চতুর দিকে পানি জমে ভিতরে ঢুকে। তখন চলাচল করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শুরু থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত সমস্যা নিয়ে কেউ এখানে বসবাস করতে পারেনা। যে অবস্থা তাতে যাযাবর আর আমাদের মধ্যে কোনো পাথর্ক্য নেই।
আদর্শ গ্রামে আরেক বাসিন্দা বৃদ্ধ নূর মোহাম্মদ বলেন, পুনর্বাসিত করার পর আজ পর্যন্ত আর কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনকি বিদ্যুৎও নেই । যাদের বয়স কম তারা চলে গেছে, আমি আর যেতে পারছিনা।
আদর্শ গ্রাম থেকে গিয়ে দীঘির পাড়ে বসবাস করছেন খয়বর আলি, লিয়াকত আলি, আজিজুলসহ অনেকেই। তারা জানান, সরকার তাদের ঘর দিয়েছিল বসবাস করতে, কিন্তু বসবাসের যোগ্য ছিলো না। বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢোকে, রাস্তা এত খারাপ যে বের হওয়া যায় না। পরিবারের সবাই কষ্ট পাচ্ছিল, তাই তারা ঘরগুলো ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
কালাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান জানান, অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়ে কেউ অবগত করেননি। চলে যাওয়ার ঘটনা অনাকাঙ্খিত। খোঁজ নিয়ে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন