ভিডিও সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রা

অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রা

মিয়ানমার থেকে বাস্তুুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রায় ছয় বছরের হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উল্লেখযোগ্য কোনো কূটনৈতিক অগ্রগতি নেই। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ওআইসির মাধ্যমে জাতিসংঘের গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলায় যে আশার সঞ্চার হয়েছিল সে ক্ষেত্রেও অগ্রগতি খুব সামান্যই।

ফলে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায়ই নৌকায় চেপে অন্য দেশে অবৈধ প্রবেশের চেষ্টা করে। এবং কখনও সফল হয় আবার কখনও বা মাঝপথেই দেশি বা বিদেশি নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের অবৈধ সমুদ্র যাত্রা আটকে দেয়। এতে তাদের জীবনের ঝুঁকি কমে।

বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অন্তত ১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়া উপকূলে পৌছেছেন। সমুদ্রে দ্ইু সপ্তাহের এই ভ্রমণে তাদের মধ্যে নৌকার মধ্যেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এখন তারা দেশটির আচেহ প্রদেশ এলাকায় অবস্থান করছেন।

সেখানে তারা আটকে আছেন। কারণ সেখানকার বাসিন্দারা তাদের নামতে দিচ্ছে না। গত বুধবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়, প্রায় ১৪০ জন দুর্বল ও ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশের উপকূল থেকে প্রায় ১ মাইল দূরে নোঙর করা একটি কাঠের নৌকায় আটকে আছেন। এই রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ভূখন্ডে নামতে দিচ্ছে না। গত শুক্রবার থেকে উপকূলে ভেসে আছে  নীল রঙের নৌকাটি।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে দক্ষিণ আচেহ জেলার লাবুহান হাজির পানি সীমায় আসতে তাদের প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভ্রমণ করতে হয়েছে এবং এই সময়ে তিনজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় গত রবিবার থেকে ১১ জন রোহিঙ্গাকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ। আচেহ পুলিশের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দলটি গত ৯ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে রওনা দেয়। পুলিশ জানায়, দলটি যখন বাংলাদেশ ছেড়ে আসে তখন এটিতে ২১৬ জন আরোহী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে ৫০ জন ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশে নেমে গেছেন।

এ ছাড়া আচেহ পুলিশ মানব পাচারের অভিযোগে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে যখন সমুদ্র শান্ত থাকে, তখন মিয়ানমারের নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা কাঠের নৌকায় করে প্রতিবেশি থাইল্যান্ড এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে থাকে। দেশি- বিদেশি মানব পাচার চক্র অর্থের বিনিময়ে এসব মানব পাচারের ব্যবস্থা করে থাকে।

আরও পড়ুন

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশ গমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ পথে বিদেশ গমনে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটে আবার অবৈধ বিদেশ গমনের সঙ্গে মানবপাচারকারী চক্র জড়িত। গত ১০ বছরে কমপক্ষে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। অভিবাসন বিষয়ক জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এ রিপোর্ট দিয়েছে।

এই হিসাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৬ হাজার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সমুদ্রে ডুবেছেন। এর মধ্যে আবার ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৭ হাজার অভিবাসী। উত্তরে আফ্রিকা থেকে ইউরোপের দক্ষিণে পৌছানোর জন্য এই সাগরকে দেখা হয় গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে। আমাদের দেশ থেকেও অবৈধভাবে বিদেশে মানবপাচার হয়ে থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে।

অবৈধভাবে বিদেশ গমন বন্ধে বৈধ পন্থায় বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। দেশেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এর পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ব্যাপারেও মনোযোগ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তবে শুধু রোহিঙ্গা নয়, দালালদের খপ্পরে যেন সাধারণ মানুষ না পড়ে, সেটাও আমলে নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, মানবপাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদে ফিরছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নতুন রূপে

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা করবে চীন

সমাবেশে নারীকে লাথি মারা সেই জামায়াতকর্মী গ্রেফতার

হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের সহজ লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

ইশরাকের শপথ সংক্রান্ত আদেশের কপি পেল ইসি

দুগ্ধজাত খাবার পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি দৈহিক ও মানসিক বিকাশ করে- ডিসি হোসনা আফরোজা