জাকির পারভেজ
২০২৪ সালের বর্তমান বন্যায় পুরো দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। এই অঞ্চলের মানুষের নিকটে এটি এক অনভিপ্রেত এবং অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। ফলে সংকটের মাত্রা আরও বেড়েছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার রেশ এখনো বিদ্যমান। ঠিক এই সময়ে আমরা আরও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি। তবে আশার কথা হলো পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বন্যার্তদের পাশে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের এই ঐক্য আমাদেরকে আশান্বিত করে। হাজারো অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার মাঝে আমরা এখানে মনোবল ফিরে পাই।
ফিরে পাই এক চিলতে মানসিক প্রশান্তি। এই সংকটকালীন সময়ে কিছু মানুষকে আমরা অগ্রগণ্য ভূমিকায় দেখছি। শায়খ আহমাদুল্লাহ তাদের অন্যতম। বর্তমান সমাজে তিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর একজন আলেম। দেশের বিদ্যমান আলেম সমাজের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যেও তাঁর কন্ঠে আমরা শুনতে পাই ঐক্যের সুর। সকল ঘরানার মানুষের মাঝেও তিনি সমান জনপ্রিয়।
শায়খ আহমাদুল্লাহর জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার বশিকপুর গ্রামে। ছাত্রজীবন থেকেই অনেক মেধাবী ছিলেন। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করেন। তার মধ্যে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা, যশোর দড়াটানা কওমি মাদ্রাসা ও খুলনা দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা অন্যতম। কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে তিনি সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন।
বর্তমানে তিনি আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। শায়খ আহমাদুল্লাহ ২০১৭ সালে নিজ হাতেই প্রতিষ্ঠিত করেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি বিভাগে কাজ করে থাকে। শিক্ষা, সেবা ও দাওয়াহ। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অলাভজনক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিভাবে নিবন্ধিত হয়।
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন ও সমাজ গঠন, একটি আদর্শ কল্যাণসমাজ বিনির্মাণ এবং বিশুদ্ধ ইলমের প্রচার ও বিস্তার তাদের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) - এর শিক্ষা ও আদর্শে উদ্ভাসিত হয়ে সেবামূলক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই সকল মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
২০২২ সালের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যায় আমরা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে শক্তভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে দেখেছি। বন্যাকালীন সময় থেকে শুরু করে পুনর্বাসন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। ২০২৪ সালের এই বন্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন আরও শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে।
যা আমাদের দেশে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। এই ব্যাপক পরিমাণ তহবিল দুটো বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়। এক. আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতি মানুষের আস্থা। দুই. মানুষের প্রতি তাদের মানবিক দায়িত্ববোধ।
ভিডিয়ো বার্তায় শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রায় প্রতিদিন তাদের কর্মযজ্ঞের আপডেট দিয়ে থাকেন। দেখা যাচ্ছে, প্রতিনিয়তই তাদের কর্ম পরিধি বেড়েই চলেছে। বন্যা-দুর্গতদের সেবায় তারা চারটি পর্যায়ে কাজ করার কথা বলেছেন।
তাদের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ২০ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭০ হাজার পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৃতীয় পর্যায়ে ৭০ হাজার পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ এবং সর্বশেষ চতুর্থ পর্যায়ে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনার কথা তারা বলেছেন। একক ফাউন্ডেশন হিসেবে এটি বেশ বড় পরিকল্পনা।
প্র্রতিদিন প্রায় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবী সেখানে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকে। যতদূর যাওয়া সম্ভব স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যেই তারা বেশ কিছু দুর্গম এলাকাতেও ত্রাণ বিতরণ করেছে। যেসকল জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তারা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তবে উল্লেখ্য যে, দেশের মূল ধারার মিডিয়াগুলোতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বরাবরই উপেক্ষিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই বৈষম্য? যখন আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের কথা বলছি, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদার কথা বলছি।
লেখক : শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক
ইন্সট্রাক্টর (রসায়ন), ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার
ভেড়ামারা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ
abdullahzarif007@gmail.com
01710-380187
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।