শোকজ নয়, তিন বিচারপতির কাছে মামলা সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি
শোকজ নয়, জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের তিন বিচারক বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি জাকির হোসেন ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের কাছে মামলা সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, হাইকোর্টে (একটি বেঞ্চে) ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার ৮০০ ব্যাক্তির জামিন হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন বিচারকের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আছে। কিন্তু ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার এত সংখ্যক জামিন কিভাবে সম্ভব? তবে, ওই দিন তিনি হাইকোর্টের কোন বেঞ্চে কিংবা কোন বিচারপতি এত সংখ্যক জামিন দিয়েছেন সেটি খোলাসা করেননি। আইন উপদেষ্টার এ মন্তব্যের পর গত কয়েকদিন আইন ও বিচারঙ্গণে নানা আলোচনার জন্ম দেয়।
গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল সংখ্যক জামিনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এই তিন বিচারকের উদ্দেশ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন প্রধান বিচারপতি। তবে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন বিচারপতিকে কারণ দর্শানো নোটিশ নয়, প্রশাসনিক কাজের অংশ হিসেবে মামলা সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে বেলা ২টা থেকে সোয়া চারটা পর্যন্ত ৬১১টি জামিনের আদেশ হয়। ওই দিন এই আদালতে ১১০৪ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ৭৬৮টিতে আদেশ হয়।
আরও পড়ুনগত ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে বেলা ১১ টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে ১১৪১টি জামিনের আদেশ হয়। ওই দিনের কার্যতালিকা অনুযায়ী, এই বেঞ্চে ১৬৫০টি আবেদন শুনে ১২২৮ টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া গত আগস্টে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি যাত্রাবাড়ি থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক সাজ্জাদুজ্জামানকে জামিন দেয়। পরে তার জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যায়।
গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপুল সংখ্যক জামিন প্রদান করায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন জন বিচারপতি মহোদয়কে শোকজ করে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে এই নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাস্তবে প্রধান বিচারপতি উল্লেখিত তিন জন বিচারপতিকে কোনো শো-কজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেননি বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলা সংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। সুতরাং উক্ত সংবাদে ব্যবহৃত তথ্যে মূল বিষয়টি বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, উক্ত বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপনীয় একটি যোগাযোগ (প্রিভিলেজড কোর্ট কমিউনিকেশন)।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে- প্রতিটি গণমাধ্যম আদালত সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পূর্বে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করবে যাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে এবং জনগণ বিভ্রান্ত না হয়।
মন্তব্য করুন


_medium_1761671451.jpg)






