ভিডিও শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

এখন সময় বেগুনের...

এখন সময় বেগুনের...

শাওন রহমান : বেগুন সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বেগুনের আদি উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ এশিয়া। এটি বন্য অবস্থায় জন্মাতো। তবে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়াতে এর চাষ হয়ে আসছে। এর উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে নানা মত থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত উপমহাদেশকে এর আদি উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ভারত ও বাংলাদেশে রান্নায় বেগুনের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। বেগুনের তরকারি পিত্তনাশক, জ্বর কমায়, খিদে বাড়ায় এবং সহজে পরিপাক করে। বেগুন ভর্তা গ্রামবাংলার অনেক সুস্বাদু খাবার। বাংলাদেশের ইফতারিতে বেগুনি একটি জনপ্রিয় খাবার।

তিন দশক আগেও বাংলাদেশে এক টাকায় এক কেজি বেগুন পাওয়া যেত। কৃষকরা বেগুন বিক্রি করতে না পেয়ে হাট-বাজারে তা ফেলে রেখে আসতো। আবার এর বড় একটি অংশ চলে যেতো গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে। এখন সে দিন আর নেই।

গত প্রায় দুই মাস ধরে বগুড়ার বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর সারা বছর সবজির কেজি থাকে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। সবজিটির এমন দামে কৃষক যেমন টাকা ঘরে তুলতে পারছেন তেমনি লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরাও, আর পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ ভোক্তার।

বাংলাদেশে প্রধানত তিনটি কৃষি মৌসুম বা ঋতু রয়েছে : রবি (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি), খরিপ-১ (মার্চ-জুন) এবং খরিপ-২ (জুলাই-অক্টোবর)। সারা বছরই দেশে বেগুন চাষ হয়। তবে বেশি চাষ হয় রবি মৌসুমে। খরিপ-২ মৌসুমে বেশি দাম হয় সব ধরণের সবজির।

বর্ষার প্রভাব থাকায় সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রভাব পড়ে বাজারে। তবে এবারের চিত্র গত কয়েক বছরের মধ্যে ভিন্ন। কারণ বৈরি আবহাওয়া। সাগরে লঘুচাপ, বৃষ্টি বলয় ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এবার দেশজুড়েই ব্যাপক পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে সবজির দামে। আর দামে বেগুন এগিয়ে আছে সবার চেয়ে।

আরও পড়ুন

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দৈনিক করতোয়া’কে জানায়, সারা বছর বগুড়াতে প্রায় ৩ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়। আর উৎপাদান হয় প্রায় ৭৭ হাজার ৪শ’ মেট্রিকটন। বগুড়ার উৎপাদিত বেগুনের ৭০ ভাগ জেলার চাহিদা মেটায়, আর অবশিষ্টাংশ চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এরমধ্যে খরিপ-১ ও খরিপ-২ তে ১১শ’ হেক্টর বেগুন চাষাবাদ হয়। তবে বেগুন চাষাবাদে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় খরিপ-২ মৌসুমে। এসময় ফলনও কম হয়। এবার বগুড়ায় রবি মৌসুমে ৩ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর খরিপ-২ তে চাষাবাদ হয়েছে সাড়ে ৫শ’ হেক্টর জমিতে। এবার পুরো শরৎকালজুড়ে বৃষ্টি থাকায় সবজির আবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে দাম।

কৃষকরা দৈনিক করতোয়া’কে বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এবার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির ফলে ফসলি জমি পানি জমে যাওয়ার পাশাপাশি নিচু জমি ডুবে যায়। এতে ফসল পঁচে ও ঝরে যায় এবং কাঙ্খিত ফলন ঘরে তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এবারের অসময়ের ভারি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা তাদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলেছে, যার ফলে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।

এছাড়াও বেগুনের ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা এবং অন্যান্য পোকার আক্রমণ আগের তুলনায় বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে ফলন কমে যায়। তাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময় মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সামান্য লাভে সবজি বিক্রি করলেও সেই সবজি কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার হাতে যায়। এতে অনেক সময় তারা যেমন ন্যায্য দাম পান না, তেমনি সাধারণ ভোক্তারাও বাড়তি দামে কিনতে বাধ্য হন।  

সবজির পাইকারি বিক্রেতাদের তথ্য বলছে, গত প্রায় দুই মাস ধরে বগুড়ার হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ বেগুন ২ হাজার ৮শ’ থেকে ৩ হাজার ৪শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরাতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি পর্যন্ত। কৃষি সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকৃতি রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। আবাহওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলেই রয়েছে। এমন আবহাওয়া থাকলে অল্প দিনের মধ্যে বেগুনের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরিবেশ সচেতনতায় তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফে পায়ে হেঁটে যুবকের যাত্রা

সাংবাদিকের ওপর হামলা, একজনকে শাস্তি দিল বিএনপি

গাজীপুর থেকে অপহৃত মুফতি মহিবুল্লাহকে শেকলবাঁধা অবস্থায় পঞ্চগড়ে উদ্ধার

বগুড়ার সোনাতলায় সৈয়দ আহম্মদ কলেজ হাটে তাবু টানিয়ে গরুর হাট

শপথ নিলেন চাকসুর নির্বাচিতরা

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বগুড়া এবং নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু