প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষোয় বগুড়ার ‘সারিয়াকান্দি নৌ বন্দর’
সি-ট্রাক বন্ধ থাকায় সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ‘র যাত্রীদের দুর্ভোগ

রাহাত রিটু : প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষোয় বগুড়ার ‘সারিয়াকান্দি নৌ বন্দর’। অন্যদিকে সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌ পথে সি-ট্রাক বন্ধ থাকায় এই রুটের যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। নৌ বন্দর চালু হলে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরও সচল হবে পাশাপাশি বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ হয়ে জামালপুর যাওয়ার দূরত্ব কমে যাবে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ঢাকঢোল পিটিয়ে সি-ট্রাক চালু করা হলেও নাব্যতা সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে বন্ধ রয়েছে সেই সি ট্রাক। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআই ডব্লিউ টি এ) সি-ট্রাক সরিয়ে নেয়।
এতে করে ওই রুটে চলাচলকারী মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগেই এ রুটে আবারও ওয়াটার বাস বা সি-ট্রাক চালু করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
১৯৯৮ সালের জুনে যমুনা সেতু চালুর পর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা ও মথুরাপাড়ায় যমুনা নদীর নৌঘাট দিয়ে অপর পাড়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলাঘাট হয়ে মানুষের চলাচল শুরু হয়। এ রুটে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করেন।
সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌঘাটের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। অথচ সড়কপথে মাদারগঞ্জ যেতে সারিয়াকান্দি থেকে ২২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বগুড়া জেলা শহরে যেতে হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে সিরাজগঞ্জ হয়ে যমুনা সেতু পাড়ি দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা হয়ে জামালপুর যেতে হয়। সবমিলিয়ে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। অথচ এই নৌপথ দিয়ে চলাচল করলেই এই পথের দূরত্ব কমে যাচ্ছে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার।
ফলে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ জেলায় যেতে একদিকে সময় ও অন্যদিকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ কারণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ফেরি, সি-ট্রাক বা অন্য নৌযান চালুর দাবি উঠে। সি ট্রাক চালুও করা হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনগত ২০২১ সালের ১২ আগস্ট এই রুটে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক সার্ভিস চালু হয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই মাসের ২২ তারিখ থেকে থেকে আট দিন বন্ধ থাকে সি ট্রাক। এরপর চালু করা হলেও ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আবারও ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর যমুনা নদীতে দেখা দেয় নাব্যতা সংকট। ফলে সি-ট্রাক কামালপুরে রৌহদহ এলাকায় ফেলে রাখা হয়। বিআইডব্লিউটিএ ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সি-ট্রাকটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
এদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ‘সারিয়াকান্দি নদী বন্দর’ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতেএকটি নতুন নদী বন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভব্যতা যাচাই করে গঠিতকমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটির পর্যবেক্ষনে ওই স্থানে নদী বন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভব্যতা পরিলক্ষিত হয়।
এরই প্রেক্ষিতে সারিয়াকান্দি উপজেলায় সারিয়াকান্দি নদী বন্দর নামক নতুন একটি নদী বন্দর ঘোষনার প্রজ্ঞাপন জারির নিমিত্ত্বে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ভেটিং গ্রহণ পূর্বকবগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ‘সারিয়াকান্দি নদী বন্দর নামক একটি নতুন নদী বন্দর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারির ব্যবস্থা গ্রহসেন জন্য অনুরোধ জানান হয়েছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআই ডব্লিউ টি এ) এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন