নওগাঁর বদলগাছীতে প্রধান শিক্ষককে অপহরণ করে অবৈধ নিয়োগপত্রে সই নেয়ার অভিযোগ

বদলগাছী(নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর বদলগাছীতে এক টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’র প্রধান শিক্ষককে অপহরণ করে অবৈধ নিয়োগপত্রে সই নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বামনপাড়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’র সুপারিনটেনডেন্ট হুমায়ুন রেজা খানকে অপহরণ করে বাসায় নিয়ে গিয়ে তিন কর্মচারীর নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে সই নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিন ও তার ছেলে বুলেটসহ আরও ৮/১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সুপারিন্টেন্ডেন্ট গত বৃহস্পতিবার রাতে বদলগাছী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সাথে মৌখিকভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ইউএনওকেও বিষয়টি অবগত করেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বামনপাড়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট হুমায়ুন রেজা খান বৃহস্পতিবার ৯ অক্টোবর বেলা আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি যাচ্ছিলেন। উপজেলার সন্ন্যাসতলা এলাকায় পৌঁছামাত্র প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিন এবং তার ছেলে বুলেট হোসেন, চককামাল এলাকার হাবিব হোসেনসহ আরও ৮/১০ জন তার পথরোধ করে তাকে জোরপূর্বক অটোচার্জার গাড়িতে তুলে জয়পুরহাট সদরে সবুজনগড় এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যান।
সেখানে তাকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদ্যালয়ের তিনজন কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে জোর করে সই করে নেন। পরবর্তীতে তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করে জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় ছেড়ে দিয়ে যান। এ ঘটনায় অত্র প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মোস্তফা বলেন, ওই তিনজন মাঝে মাঝে স্কুলে আসতেন। তারা নিয়োগ পেয়েছেন বললেও কোনোদিন নিয়োগপত্র দেখাননি। এছাড়া কখনও হাজিরা খাতায় সই করেননি।
মাঝে মাঝে আসতেন বলে জানালেন, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইংরেজি শিক্ষক আতিকুর রহমান এবং এনামুল হকসহ একাধিক শিক্ষক। তারা বলেন, আমরাও শুনতাম। কিন্তু কখনও নিয়োগপত্র দেখাননি বা হাজিরা খাতায় সই করেননি। ভুক্তভোগী হুমায়ুন রেজা খান বলেন, আমি গত ২০২২ সালে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি। তখন সভাপতি ছিলেন বশির উদ্দিন। যোগদানের পর তার কাছে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাগজ চাইলেও তিনি কখনও বুঝে দেননি।
আরও পড়ুনএরপর তিনি একক ক্ষমতা বলে গত ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানে তিনজন কর্মচারী নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এবং নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তাদের নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এরইমধ্যে আমাকে অপহরণ করে নৈশ্যপ্রহরী বাঁধন হোসেন, আয়া পদে ফারজানা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে জালাল হোসেনের নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রসহ এমপিওভুক্ত করতে যে যে কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তাতে আমাকে মারধর করে সই করে নেন।
নৈশপ্রহরী পদের বাঁধন হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপহরণের বিষয়ে কিছু জানি না। আমার বেতন হয়নি, এই জন্য সপ্তাহের পাঁচ দিনের মধ্যে একদিন স্কুলে যাই। আর অন্যান্য দিনে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এবিষয়ে জানতে পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ছেলে বুলেটের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনাটি সত্য নয়, পরে সংযোগটি কেটে দেন।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ হাতে পেয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। তবে তদন্তে এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি নিয়োগ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ঝামেলা চলছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি।
মন্তব্য করুন