বগুড়া-জয়পুরহাট-নওগাঁ-নাটোর রেলপথে ২১ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে ১২০ জন নিহত

মাসুদুর রহমান রানা: বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ১৯৫ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২১ মাসে এ চার জেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন ১শ’ ২০ জন। চার জেলার মধ্যে বগুড়ায়  সর্বাধিক ৫৪ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো: সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, প্রধানত অসচেনতার কারণেই এ সব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। রেললাইন পার হওয়ার সময় বা লাইনের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় মোবাইল ফোন ও কানে ইয়ারফোন ব্যবহার করা, রেললাইন ধরে অসতর্কভাবে হাঁটা, রেললাইনের পাশ দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব না মেনে যাতায়াত করা, না দেখে তাড়াহুড়া করে লেভেলক্রসিং পার হওয়া, চলন্ত ট্রেন আসার সময় সেলফি তোলার চেষ্টা, টিকটক করা, রেললাইনের ওপর বসে বেখেয়াল হয়ে গল্প করাসহ নানা কারণে ট্রেনে কেটে মানুষ মারা যাচ্ছে। সেইসাথে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে। তিনি বলেন এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়লে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।

রেলওয়ে পুলিশ সান্তাহার থানার ইনচার্জ (ওসি) মো: হাবিবুর রহমান দৈনিক করতোয়াকে বলেন, চলতি বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে গতকাল ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ মাস তিন দিনে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও নাটোর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন ৫২ জন। এছাড়া এর আগের বছর ২০২৪ সালে এক বছরে এই চার জেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন আরও ৬৮ জন।

এ নিয়ে মোট ২১ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন মোট ১২০ জন। এর মধ্যে বগুড়া জেলায় মারা গেছেন মোট ৫৪ জন। নিহত মোট ১২০ জনের মধ্যে ৯৯ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী রয়েছেন।  এ সব মৃত্যুর ঘটনায় থানায় ১১৮টি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সান্তাহার, সোনাতলা, নাটোরের বাগাতিপাড়া মালনচি স্টেশন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও বাগজানা পর্যন্ত  মোট ১৯৫ কিলোমিটার  রেলপথ তার থানা এলাকার মধ্যে। গত ২১ মাস তিন দিনে এই ১৯৫ কিলোমিটার রেলপথে  ট্রেনে কাটা পড়ে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১ অক্টোবরেও বগুড়ার আদমদীঘিতে ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত এবং একজন আহত হয়। ওইদিন রাত ১২ টার দিকে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ব্রডগেইজ রেললাইনের রেলক্রসিং এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার বামনীগ্রামের মৃত নয়ন হোসেনের ছেলে তৌফিক হোসেন (১৯) এবং একই গ্রামের হেলাল হোসেনেরে ছেলে মারুফ হোসেন (১৯)। আহত আরেকজন হলেন ওই গ্রামেরই আব্দুর রহিমের ছেলে আকাশ (১৯)। আহত আকাশকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বগুড়া-জয়পুরহাট-নওগাঁ-নাটোর রেলপথে ২১ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে ১২০ জন নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিষপানে দুই শিশুসহ মায়ের মৃত্যু

ডিগ্রি ছাড়াই ডাক্তার সেজে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন আ.লীগ নেতা

এ ছাড়া এর মাস তিনেক আগেও বগুড়া শহরের ওয়াপদা গেটের সামনে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ এর পশ্চিম-দক্ষিণপাশে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান কলেজ ছাত্র মোস্তাকিম। ওই এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে রেললাইন পার হতে গিয়ে  ট্রেনের ধাক্কায় তিনি নিহত হন।

রেলওয়ে সান্তাহার থানার ইনচার্জ এই কর্মকর্তা বলেন, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু। রেললাইন ধরে অসতর্কভাবে হাঁটা, কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে যাতায়াত, তাড়াহুড়া করে রেলক্রসিং পার হওয়া, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ এবং চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তোলাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা।

এছাড়া চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা তো রয়েছেই। সেইসাথে রেল লাইন ঘিরে হত্যাকাণ্ডের মতো আরও ঘটনাও ঘটছে। জিআরপি’র এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, রেলের প্রচলিত আইনে রেললাইন ধরে হাঁটা অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু লাইন নয়, লাইনের দুই পাশে (১০ ফুট করে) ১৪৪ ধারা জারি থাকে সব সময়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, এই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদি পশু চড়ালেও তা আটক করে তা বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধানও রয়েছে। কিন্তু এ আইন প্রতিনিয়তই ভঙ্গ করছেন পথচারীরা।

তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, রেললাইন যে এলাকায় রয়েছে সেসব এলাকায় বিট পুলিশিং করা হয়। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। মানুষ সচেতন না হলে  রেলের দুর্ঘটনা কমবে না।