হাদিসের ভাষায় ভালো মৃত্যুর ১৫টি আলামত

মৃত্যু জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। জন্ম নিলে একদিন মারা যেতে হবে। মায়াঘেরা দুনিয়ার রূপ-রঙ ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হবে— যেখানে কেউ কারও বন্ধু হবে না, হবে না শত্রুও। নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
‘মৃত্যু নিশ্চিত’ এ কথা সব ধর্মের মানুষই বিশ্বাস করেন। তবে কোনো মানুষই অপ্রত্যাশিত মৃত্যু কামনা করেন না। প্রতিটি মুমিনেরই একান্ত চাওয়া, তার মৃত্যু যেন ইমানি হালতে হয়। ভালো অবস্থায় হয়। কারণ শেষ সময়টাই আল্লাহ তায়ালার নিকট সবিশেষ গ্রহণযোগ্য। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘শেষ আমলই গ্রহণযোগ্য।’ (ইবনে হিব্বান : ৩৪০)
অন্য হাদিসে তিনি (সা.) সাহাবিদের জানিয়েছেন, ‘আল্লাহ যদি কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তখন তাকে (ভালো) কাজে লাগান।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কীভাবে আল্লাহ বান্দাকে (ভালো) কাজে লাগান? তিনি (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজ করার তাওফিক দেন।’ (তিরমিজি : ২১৪২)
ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন, ভালো মৃত্যুর অনেক আলামত আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো আলামত শুধু মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারেন এবং কিছু আলামত অন্যান্য মানুষও জানতে পারে। আজকের আয়োজনে কালবেলার পাঠকদের জন্য প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার মুফতি আরিফ বিন হাবিবের বয়ান থেকে ভালো মৃত্যুর ১৫টি আলামত তুলে ধরা হলো। চলুন, সেই আলামতগুলো জেনে নিই-
১. মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠ করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (আবু দাউদ : ৩১১৬)
২. মৃত্যুর সময় কপাল ঘেমে যাওয়া
ইমানদার মারা যাওয়ার সময় যদি দেখো তার কপাল ঘেমে যায়, তবে বুঝবে তার মৃত্যু খুবই সুন্দর। উল্লেখ্য, কারও যদি কপাল না ঘামে, তবে তাকে জাহান্নামি মনে করা যাবে না। (নাসাঈ : ১৮২৮)
৩. জুমার রাতে বা দিনে মৃত্যুবরণ করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি বৃহস্পতিবার দিনের সূর্য ডোবার পর থেকে নিয়ে শুক্রবার দিনের সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন, আশা করা যায় কবরের আজাব থেকে আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন। (তিরমিজি : ১০৭৪)
৪. শহীদী মৃত্যু
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেসর করেন, ‘তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য করো?’ তারা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জীবন দেয় সে তো শহীদ।’
নবীজি (সা.) বললেন, ‘তবে তা আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে।’ তখন তারা বললেন, ‘তাহলে তারা কারা হে আল্লাহর রাসুল?’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে (জিহাদে) নিহত হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (সৎকাজে) বের হয়ে রাস্তায় মারা যায়, সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে মারা যায়, সেও শহীদ এবং যে ব্যক্তি পেট খারাপের রোগে মারা যায়, সেও শহীদ। (মুসলিম : ৪৮৩৫)
৫. কোনো কিছু ধসে পড়ে মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তি যদি দেয়াল ধসে বা কোনোকিছু ধসে তার উপর পড়ে আর সে মারা যায়, তবে আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (বোখারি : ৬৫২)
৬. গর্ভবতী অবস্থায় নারীর মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে কোনো নারী যদি পেটে বাচ্চা নিয়ে অথবা বাচ্চা প্রসবকালে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (ইবনে মাজা : ২৮০৩)
আরও পড়ুন৭. বিষফোড়া নিয়ে মৃত্যু
নবীজি (সা.) বলেছেন, আমার কোনো উম্মত যদি বিষফোড়ার আঘাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (নাসাঈ : ১৮৪৬)
৮. আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া
বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, আমার কোনো উম্মত যদি আগুনে পুড়ে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (নাসাঈ : ১৮৪৬)
৯. নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার কোনো উম্মত যদি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (বোখারি : ২৮৪০)
১০.পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু
মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার কোনো উম্মত যদি পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (নাসাঈ : ৪০৯৫)
১১. দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত
রাসুল বলেছেন, ইসলাম রক্ষা করতে গিয়ে যদি আমার কোনো উম্মত নিহত হয়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (নাসাঈ : ৪০৯৫)
১২. নিজের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত
নবীজি (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি নিজের প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (নাসাঈ : ৪০৯৫)
১৩. জুলুম প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন, জুলুম প্রতিহত করতে গিয়ে আমার কোনো উম্মত যদি নিহত হয়, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। (নাসাঈ : ৪০৯৬)
১৪.আল্লাহর রাস্তায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিতে গিয়ে কেউ যদি মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে হেফাজতে রাখবেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তার আমল শুধু বাড়তেই থাকবে। (তিরমিজি : ১৬৬৫)
১৫. সদকা করার পরপরই মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মানুষ সদকা করার একটু পর যদি মারা যায়, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ ছাড়া কেউ যদি নফল রোজা রাখা অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাকেও জান্নাত দান করবেন। (মুসনাদে আহমদ : ২৩৩৭২)
মন্তব্য করুন