নামাজে কখন সাহু সিজদা দিতে হয়

সাহু সিজদা কী?
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় সাহু সিজদা বলা হয় কোনো কারণে ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়া নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে শুধু ডান পাশে সালাম ফিরিয়ে দুটি অতিরিক্ত সিজদা করাকে। সাহু সিজদার পর আবার তাশাহহুদ পড়ে, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে ডান ও বাম পাশে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়। সাহু সিজদার মাধ্যমে ওই ভুলগুলোর প্রতিবিধান হয় এবং নামাজ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
সাহু সিজদার নিয়ম : যে নামাজে সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার মত কোনো ভুল-ত্রুটি হয়েছে, ওই নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর শুধু ডান দিকে সালাম ফেরাবেন, তারপর বসা অবস্থা থেকেই তাকবির বলে সিজদায় চলে যাবেন। নামাজের অন্যান্য সিজদার মতই তাসবিহ পাঠ করে সিজদা সম্পন্ন করবেন এবং তাকবির বলে সিজদা থেকে উঠে বসবেন। তারপর বসা থেকে আবার তাকবির বলে সিজদায় যাবেন এবং সিজদা সম্পন্ন করে তাকবির বলে উঠে বসবেন। তারপর তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবেন।
আবদুল্লাহ ইবনে বুহাইনাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন জোহরের নামাজে দুই রাকাতের পর বৈঠক না করেই দাঁড়িয়ে গেলেন। নামাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি দুটি সিজদা করলেন, তারপর সালাম ফেরালেন। (সহিহ বুখারি: ১২২৫)
নামাজে মৌলিকভাবে পাঁচ ধরনের ভুল হলে সাহু সেজদা দিতে হয়। সেগুলো হলো:
১. ওয়াজিব ছুটে যাওয়া
নামাজে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা করতে হয়। যেমন নামাজে দুই রাকাতের পর বসে তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। কেউ যদি ভুল করে দুই রাকাতের পর না বসে, তাহলে সাহু সিজদা দিতে হয়।
২. ফরজ দুইবার আদায় করা
কোনো ফরজ দুইবার আদায় করলে সাহু সিজদা দিতে হয়। যেমন নামাজে প্রতি রুকুতে একবার রুকু ও দুইবার সিজদা করতে হয়, কেউ ভুল করে দুইবার রুকু করলে বা তিনবার সিজদা করলে সাহু সিজদা দিতে হবে।
৪. কোনো ওয়াজিব পরিবর্তন করা
নামাজে কোনো ওয়াজিব পরিবর্তন করলে সাহু সিজদা দিতে হয়। যেমন জোহর ও আসরের নামাজে কেরাত আস্তে পড়া ওয়াজিব, কেউ যদি এই দুই ওয়াক্তের নামাজে কেরাত জোরে পড়ে, তাহলে সাহু সিজদা দিতে হয়।
৫. ফরজ বা ওয়াজিব আদায়ে দেরি করা
কোনো ফরজ বা ওয়াজিব আদায়ে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরি হলে সাহু সিজদা দিতে হয়। যেমন নামাজে তৃতীয় রাকাতের সিজদার পর কিয়াম করা বা দাঁড়ানো ওয়াজিব। কেউ যদি তৃতীয় রাকাতের সিজদার পর বসে থাকে এবং তিন তাসবিহ পড়তে যতটুকু সময় লাগে এর বেশি পরিমাণ সময় বসে থাকে তাহলে কিয়াম করতে দেরি হওয়ার কারণে সাহু সিজদা দিতে হয়।
নামাজে এই ভুলগুলো হয়ে গেলে নামাজি যদি সাহু সিজদা দেয় তাহলে এর মাধ্যমে এই এই ভুলগুলোর প্রতিবিধান হয় এবং নামাজ বিশুদ্ধ হয়ে যায়। সাহু সিজদা আদায় না করলে ত্রুটিযুক্ত নামাজটি আবার পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।
ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের কোনো ওয়াজিব আমল ছেড়ে দিলে বা এসব ত্রুটি করলে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামাজ শুদ্ধ হবে হবে না। বরং এজন্য গুনাহগার হতে হবে এবং ওই নামাজ পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব হবে।
মন্তব্য করুন