সম্পত্তি সঠিক বণ্টন না করার বিড়ম্বনা
বগুড়ার শাজাহানপুরে পান ব্যবসায়ী হামেদের লাশ রেখে জমি দলিল : ১৯ ঘণ্টা পর দাফন

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: সম্পত্তি থেকে একমাত্র ছেলেকে বঞ্চিত করায় বগুড়ার শাজাহানপুরে হামেদ আলী (৫৮) নামের এক পান ব্যবসায়ীর লাশ ফেলে রেখে মুসলিম ফারায়েজ মোতাবেক সম্পত্তি বণ্টন পূর্বক রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। দলিল সম্পাদনের পর হামেদ আলীর মরদেহের নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ শালুকগাড়ী গ্রামে।
প্রতিবেশিরা জানান, রহিমাবাদ শালুকগাড়ী গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে হামেদ আলী (৫৮) পেশায় একজন পান ব্যবসায়ী। তার সংসারে স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি রাজশাহী থেকে পান কিনে এনে শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করতেন। গত ২-৩ বছর যাবত তিনি ক্যান্সারে ভূগছিলেন।
ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং বিগত ২ মাস যাবত তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ৪-৫ দিন আগে হামেদ আলী তার বসতবাড়িসহ যাবতীয় সম্পত্তি স্ত্রী ও ২ মেয়েকে লিখে দেন। এতে একমাত্র ছেলে সন্তান মাসুদ রানা (৩০) পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। এক পর্যায়ে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন হামেদ আলী।
তার মৃত্যুর পর সম্পদ বঞ্চিত ছেলে মাসুদ রানা পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা দাবি করেন এবং সম্পত্তির মালিকানা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত হামেদ আলীর লাশ দাফন না করতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। এমতাবস্থায় স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার, প্রয়াত হামেদ আলীর স্বজন ও প্রতিবেশিরা সম্মিলিত ভাবে আলাপ আলোচনা মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করেন।
আরও পড়ুনসে মোতাবেক আজ রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে হামেদ আলী স্ত্রী মনোয়ারা ও ২ মেয়ে হীরা ও মাহি শাজাহানপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে মাসুদ রানাকে তার ন্যায্য হিস্যা মোতাবেক সম্পত্তির দলিল সম্পাদন করে দেন। সব মিলিয়ে মৃত্যুর ১৯ ঘণ্টা পর গতকাল বিকাল ৩টার দিকে নিজ এলাকায় হামেদ আলীর নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। হামেদ আলীর বড় বোন হামিদা বেগম জানান, ছেলেকে বঞ্চিত করে স্ত্রী ও ২ মেয়েকে যাবতীয় সম্পত্তি লিখে দিয়ে অন্যায় করেছিলেন হামেদ আলী।
কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের দৃঢ় পদক্ষেপে মাসুদ রানা তার পৈর্তৃক সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেয়েছে। অন্যথায় মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী-সন্তানরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়তো। এমন মহৎ কাজের জন্য আড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ও প্যানেল চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এলাকাবাসির প্রসংশায় ভাসছেন বলে মন্তব্য করেন হামেদ আলীর চাচাত ভাই আরিফুল ইসলাম।
জমি দলিলের পর হামেদ আলীর লাশ দাফন করা হয়েছে উল্লেখ করে আড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান জানান, দোতলা বাড়িসহ ১২ ভিটা ও ৭৩ শতক ফসলি জমির মালিক ছিলেন হামেদ আলী। কিন্তু একমাত্র ছেলেকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি স্ত্রী ও ২ মেয়েকে লিখে দিয়েছিলেন। অবশেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করেছেন।
মন্তব্য করুন