ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫

উত্তরের জেলাগুলোর আমনক্ষেতে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

বড় বিনিয়োগ করে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আমন চাষিরা

বড় বিনিয়োগ করে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আমন চাষিরা। ছবি : দৈনিক করতোয়া

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড় : হেমন্তের নীল আকাশ। সাদা মেঘের আনাগোনাও বেশ। মাঝে মাঝে মেঘ গুড় গুড় করে ঘন কালো অন্ধকার নেমে আসছে। সামান্য বৃষ্টি ঝড়ে মেঘ কেটে আবারও দেখা মিলছে সূর্যি মামা। উত্তরের মেঘ কেটে মাঝে মধ্যেই দেখা মিলছে মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘারও। আর নিচে দিগন্তজুড়ে আমন ক্ষেতে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন প্রকৃতি নির্ভর আমন ধান।

সব বাধা কাটিয়ে এবার আমনের বাম্পার ফলনে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে পঞ্চগড়সহ উত্তরের কয়েকটি জেলার আমন চাষিরা। ইতোমধ্যে জমিতে লাাগানো ছোট্ট আমন চারা অনেক বড় হয়েছে। পরিমিত সার আর পরিচর্যায় লকলকে চারা গাছ এখন কৈশোরকাল অতিক্রম করছে।

পূর্ণতা পেয়ে সবুজাভ রঙ ধারণ করেছে আরও গাঢ় সবুজ রঙে। এরই মাঝে আগাম জাতের কিছু ধানের শীষ বের হয়েছে। বড় কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আর মাত্র এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোর কৃষকদের প্রাণ প্রকৃতি নির্ভর আমন ধান। তুলনামূলকভাবে উঁচু জমি এবং মাটিতে বালুর আধিক্যের কারণে এই অঞ্চলের কৃষকদের একমাত্র ভরসা প্রকৃতি নির্ভর আমন ধান। এই আমন ধান কৃষকের সারাবছরের খাবারসহ পরিবারের খরচের যোগান দেয়। আদিকাল থেকেই চলে আসছে এই নিয়ম। তবে এবার শুরুতেই হোচট খেয়েছেন চাষিরা। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় কৃষকরা এবার আগেভাগেই বীজতলায় আমন চারা বপণ করেছিলেন।

কিন্তু মৌসুমের শুরুটাই ছিল প্রায় বৃষ্টিহীন। অনেকের বীজতলায় চারা নষ্ট হয়েছে; অনেকে বেশি টাকা খরচ করে সেচ দিয়ে জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরু করেছিলেন। তবে অপেক্ষার পালা শেষ করে মধ্য মৌমুমের বৃষ্টিতে শেষ করতে পেরেছেন চারা রোপণের কাজ। তবে শুরুতেই ধাক্কা লেগেছিল ননইউরিয়া সারে। প্রয়োজনের সময় ডিলারের কাছে মিলছিল না টিএসপি, ডিএপি ও পটাশ সার। সার সংকটের কারণে তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে সার কিনে জমিতে দিতে হয়েছে।

এর পরই শুরু হয় আমনের ক্ষেতে মাজরা পোকা আর খোলপঁচা রোগের প্রাদুর্ভাব। বার বার ওষুধ স্প্রে করেও কোন কাজে আসছিল না। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে আমন চাষে খরচ বেড়েছে অনেক। তারপরেও আমন আবাদে লাভের মুখের দিকে তাকিয়ে কৃষকরা। তাদের আশা মৌসুমের শেষ দিকে এসে প্রকৃতি তাদের মুখপানে চেয়েছে।

আরও পড়ুন

বিরতি দিয়ে মাঝে মধ্যেই হচ্ছে বৃষ্টি। এখন পর্যন্ত ঝড়ের তেমন একটা প্রভাব নেই। আবার শুরু হয়েছে মৌসুমের শেষ বৃষ্টি। এই বৃষ্টির পানি দিয়েই ধান গাছে শীষ বের হতে আর কোন সমস্যা হবে না। শেষ দিকে ব্যাপক আকারের কোন পোকার আক্রমণ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে বেশি খরচ করেও লাভের মুখ দেখতে মরিয়া আমন চাষিরা।

এ নিয়ে কথা হয় পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের খানপুকুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, এবার নিজের সামান্য জমির সাথে বর্গা নেয়াসহ মোট সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। বেশি দামের সার আর মাজরা ও খোলপঁচা রোগ দমনে ইতোমধ্যে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সামনে আরও খরচ আছে। শেষ পর্যন্ত আসলে জমির ধান ঘরে তুলতে পারব কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। না হলে আগের বছরের মত বর্গার ধান দিতে আর ঋণ পরিশোধ করতেই সব ধান শেষ হয়ে যাবে।  

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মতিন বলেন, প্রথম দিকে সারের সংকট থাকায় কৃষকরা চাহিদামত সার পাননি। বর্তমানে সমন্বিত প্রচেষ্টায় চাষিদের সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।  চলতি আমন মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় এক লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

তবে মৌসুমের শেষ সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এক লাখ ৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৫ মেট্রিকটন। আবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদনও বাড়বে। অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়া শহরে নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করল পুলিশ

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবিসমূহ পর্যায়ক্রমে পূরণ করা সম্ভব : তথ্য উপদেষ্টা  

ইলিশ রক্ষায় পুলিশ, নৌ-বাহিনী ছাড়াও বিমানবাহিনী ড্রোন দিয়ে কাজ করবে: মৎস উপদেষ্টা

সব স্বাভাবিক হলেই ১৪৪ ধারা তুলে নেয়া হবে: খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক

বগুড়ার শেরপুরে টানা বৃষ্টিতে মহাসড়ক ও বসতবাড়িতে হাটু পানি

মাদরাসায় পড়েছি, এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন: ধর্ম উপদেষ্টা