ভিডিও রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছ

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছ

দেশি মাছের অভাব তীব্রতর হচ্ছে। দেশের ঐতিহ্যের অংশ বলে বিবেচিত হয় যেসব দেশীয় প্রজাতির মাছ তা অস্তিত্ব হারানোর পথে। হাইব্রিড ফসল ও মাছ উৎপাদনের দিকে নজর দিতে গিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন নিশ্চিত করা হচ্ছে। দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, দেশীয় প্রজাতির মাছ।

প্রাকৃতিক উৎসে জন্মানো কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, চাপিলা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, পাঙ্গাস, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশি মাছগুলো এখন আর দেখা যায় না বললেই চলে। দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্য থেকে ২০-২২ বছরের ব্যবধানে ৬৫ প্রজাতির মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দেশীয় আরও শতাধিক মাছের অস্তিত্বও এখন বিপন্ন প্রায়।

কথায় আছে- ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ স্বাধীনতার পর এ দীর্ঘ সময়ে জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। অপরদিকে উন্নয়ন ও নতুন আবাসনের সুবিধার জন্য দেশের বিপুল সংখ্যক খাল-বিল-পুকুর-ডোবা ভরাট করা হয়েছে। ফলে মৎস্য প্রিয় সাধারণ বাঙালি পরিবারে দেশি মাছের অভাব দেখা দেয়। ছোট আকারের দেশি মাছ বাজারের অন্যসব মাছের তুলনায় খাদ্যগুণে অনেক বেশি সমৃদ্ধ।

চিকিৎসকরা শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষের পুষ্টির জন্য সাধারণত এসব দেশি মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাজারে সরবরাহ না থাকায় এসব মাছের দাম খুবই বেশি। রোগীদের জন্য পথ্য হিসাবে ডাক্তাররা প্রায়ই শিং-মাগুরের ঝোল খেতে বলেন। কিন্তু বাজারে শিং-মাগুরের দাম হাজার টাকা কেজি।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বিদেশি মাত্র ২৪ প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ব্যাপকতা দেশি আড়াই শতাধিক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দেশি প্রজাতির মাছ চাষ বৃদ্ধি, সংরক্ষণের পাশাপাশি বিপন্নতা রোধে নানামুখী কর্মসূচি নেওয়ার জন্য সরকারের জরুরি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষি জমিতে অবাধে কীটনাশক ও মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে তার ধোয়ানি পড়ছে নদী-নালা, খাল-বিলে।

আরও পড়ুন

ফলে বিল-ঝিলের স্বচ্ছ পানিও মুহূর্তে বিষাক্ত হয়ে পড়ে, পরিণত হয় তরল ময়লা-বর্জ্যরে আধার। সেসব বিষাক্ত পানির কারণে দেশি মাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া হাইব্রিড মাছ চাষের আগে পুকুর-ডোবার পানিতে নানা প্রকার বিষ মেশানোর কারণে মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।

মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, আর্থিক মুনাফার আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশি মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। খাল-বিল-নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণেও দেশি মাছের আকাল শুরু হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ শুধু ঐতিহ্যের অংশ বলেই বিবেচিত নয়, এগুলো হাইব্রিড মাছের চেয়ে স্বাদে যেমন অতুলনীয় তেমন পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত।

তাই ক্রেতার চাহিদা মেটাতে আবার পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশি মাছ বাজারে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা জরুরি। মৎস্য গবেষকদের মতে, জলবায়ুর পরিবর্তন, জমি ও খালে বিলে অধিক মাত্রায় ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশি মাছ ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে আগামী তিন চার দশক পরে অনেক দেশি মাছ চিরতরে বিলুপ্ত হবে।

তখন আমাদের হ্যাচারিতে প্রজননকৃত থাই সরপুটি, পাঙ্গাস, তেলেপিয়া, কই, কাতল, মৃগেল কিংবা সিলভার কার্প জাতীয় মাছের ওপর নির্ভর করতে হবে। খাদ্যগুণ ও পুষ্টির দিক দিয়ে দেশি মাছের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। দেশের নদী, খাল-বিলের পানিকে দূষণমুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। জমিতে রাসায়নিক সারের বদলে অধিক পরিমাণে পরিবেশবান্ধব জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে মজা ডোবা, খাল, বিল পুনর্খনন করে দেশি মাছের অবাধ বংশ বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জয়পুরহাটের কালাই শিয়ালের কামড়ে একই গ্রামের আহত ১০

ঠাকুরগাঁওয়ে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় মামলা গ্রেফতার ৩

বগুড়ায় শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ারসহ দুইজন খুন

ডাকসু নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

তৌহিদ আফ্রিদি ইস্যুতে মুখ খুললেন দীঘি