নির্বাচনী রোডম্যাপে যা আছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত করা সহ ২৪ গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রাধান্য দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ঘোষিত রোড ম্যাপ অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে এবং তফসিল ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কমিশন কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে রোড ম্যাপের বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ইসি সচিব আখতার হোসেন।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসব্যাপী অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নারী সমাজের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া নভেম্বরে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয়, প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও ভোটের ব্যালট-ফরমসহ বিভিন্ন ধরনের খাম মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে।
এর অর্থ হলো-নির্বাচনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, সেটি প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে বিতর্ক এড়ানো যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বিগত পতিত সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে চরম জালিয়াতি হয়েছিল। এ বিষয়টি এবার খেয়াল রাখতে হবে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং ঐতিহাসিক নির্বাচন আয়োজন করার জন্য এই সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘পতিত শক্তি গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টা প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্ত বড় সুযোগ আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। বলা বাহুল্য, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে একটি সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া সম্ভবত এ পরিস্থিতির অবসান সম্ভব নয়।
আরও পড়ুনসরকারের সামনে প্রধান কাজটি হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করা। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ধোঁয়াশা ছিল, তা কেটে গেছে। ফলে সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের জল খোলা করার দিন শেষ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন যেমন দরকার, সংস্কারও তেমন প্রয়োজন। অতীতের সরকারগুলো যে ভুল করেছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করবে।
দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে। দেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় থাকবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবে এবং গণতান্ত্রিক ধারায় দেশে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। আশা রাখছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হবে। সফল ও স্বচ্ছ ভোটাধিকার গণতন্ত্রকে বিকশিত করে।
পরমত সহিষ্ণুতা ও বহুমতকে সহ্য করার প্রতি ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে অনুপ্রেরণা দেয়। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণের সর্বাধিক মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা, ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করুক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সমহিমায় তার উজ্জলতা নিয়ে।
মন্তব্য করুন