নিশ্চিত হোক নিরাপদ খাদ্য
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে খাদ্যে ভেজালের সংবেদনশীল খবরগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাঠকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে চলেছে। খাদ্য পণ্যে ভয়াবহ ভেজালের দৌরাত্ম্য কিছুতেই কমছে না। খাদ্য ব্যবসায় জড়িত কিছু অতি মুনাফা লোভী এর জন্য দায়ী।
নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য ও খাদ্য পণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের এক চেটিয়া আধিপত্য চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সততার ঘাটতিও ক্রমেই বাড়ছে। বিগত দেড় দশকে পতিত সরকারের ছত্রছায়ায় এই অসাধু ব্যবসায়ীরা ডালপালা মেলে জাতির ঘাড়ে জেঁকে বসেছিল।
স্মর্তব্য ২০১৯ সালে মহামান্য হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ নিম্নমানের ৫২ খাদ্য পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিল। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখেছি, হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পরও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিস্থিতির তেমন হেরফের ঘটেনি। অন্তত পত্র-পত্রিকার রিপোর্টগুলি তেমনটিই বলেছিল।
অথচ সরকারি সংস্থার দায় ভেজাল চিহ্নিত হওয়ার পরই উপযুক্ত সরকারি সংস্থা দায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, সেটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। তবে মাঝে মাঝেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ টিম বাজারে অভিযান চালিয়ে নকল বা ভেজাল পণ্য আটক করে, অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করে তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়।
লোকবলের অভাবে এ ধরনের অভিযান পর্যাপ্ত সংখ্যায় চালানো যায় না। অথচ আমাদের দরকার জেলায় জেলায় ভেজাল নির্ণয়কারি টেস্টিং ল্যাবরেটরি। যেন স্থানীয়ভাবেই আমরা বাজার থেকে খাদ্য পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে স্থানীয় ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখতে পারি বাজারে প্রচলিত পণ্যে ভেজাল আছে কিনা।
বাংলাদেশের হাজারও সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো খাদ্যে ভেজাল। খাদ্যে ভেজাল আজ আমাদের জাতীয় জীবনে এক মহাদুর্যোগের নাম। অথচ মানুষের সুস্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার অতি জরুরি। ফলে বাংলার মাটি থেকে খাদ্যে জীবনসংহারী ভেজাল মেশায় যারা, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।
আরও পড়ুনএটা সত্য, বিগত পতিত সরকারের দুর্নীতি আর অনিয়মের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ভেজালকারীরা দেশবাসীকে অসহনীয় পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষকে কিডনি রোগ, ক্যান্সার সহ নানাবিধ মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে হলে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। দেশে ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উৎপাদন করেই হোক কিংবা আমদানি করেই হোক, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে ভেজাল মুক্ত খাদ্য এদেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সেই সাংবিধানিক অধিকার সামনে রেখেই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের নিরাপদ খাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রাখতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তাও খতিয়ে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
দেশের জনগণকে নিরাপদ খাদ্য দ্রব্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের মূল ভিত্তিসমূহ হলো- খাদ্যে ভেজাল না মিশিয়ে তা সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে, খাদ্য ভেজাল মিশ্রিত দেখা দিলে যারা তার সঙ্গে নিযুক্ত বা জড়িত তাদের সঠিক ব্যবহারের আওতায় আনতে হবে।
তাদের বিরুদ্ধে বিচার বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল বিষয়ে জিরো টলারেন্সে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মনে রাখতে হবে, ভেজাল খাদ্য পণ্য জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা কোনোক্রমেই হতে দেওয়া যায় না।
নিরাপদ খাদ্য ও পণ্যের মান নিশ্চিতে বিএসটিআই ও ক্যাব যৌথভাবে ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি, বিএসটিআইর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সেবার মান নিয়ে ভোগান্তি নিরসনে একযোগে কাজ নিলে নকল ভেজাল রোধে সাফল্য অর্জিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মন্তব্য করুন