ভিডিও বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৬ দুপুর

২৩ আসনে ২৩ জয়: খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস

বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এমন একটি নাম আছে, যার পাশে কখনোই পরাজয়ের ছায়া পড়েনি। ভোটের ময়দানে দাঁড়ানো মানেই জয় এই বিরল নজির গড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফেনী থেকে বগুড়া, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর কিংবা খুলনা যেখানেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন, সেখানেই জনগণের রায়ে বিজয়ী হয়ে ফিরেছেন। ভোটে হার শব্দটি যেন তাঁর রাজনৈতিক অভিধানে’ই নেই।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া একমাত্র নেতা, যিনি পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই জয় পেয়েছেন। এমনকি যেসব নির্বাচনে তাঁর দল সরকার গঠন করতে পারেনি, সেসব নির্বাচনেও তিনি যে কয়টি আসনে দাঁড়িয়েছেন, সব কটিতেই বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, ব্যালটের বাক্সে খালেদা জিয়ার নাম মানেই নিশ্চিত জয় এটাই ইতিহাসের সাক্ষ্য।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮ এই পাঁচটি আসনে প্রার্থী হন। প্রতিটি আসনেই তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। একই সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নেন তিনি।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ ও ২, বগুড়া-৭, সিরাজগঞ্জ-২ ও রাজশাহী-২ আসনে প্রার্থী হয়ে সব কটিতেই জয়ী হন খালেদা জিয়া। যদিও ওই নির্বাচন একতরফা হওয়ায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে সেই সংসদেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর বিল পাস হয়। শপথ নেওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় তিনি পদত্যাগ করেন এবং সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবুও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নির্বাচনী জয়রথ থামানো যায়নি। বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১ এই পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই জয়লাভ করেন তিনি।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনে প্রার্থী হন। প্রতিটি আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন একজন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে নির্বাচন করার সুযোগ নির্ধারণ করলে খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনটি আসনেই তিনি জয়ী হন, যদিও সেই নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

খালেদা জিয়া ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক নেতা। তাঁর আপসহীন অবস্থান ও সংযত আচরণ দল-মত নির্বিশেষে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে, কিন্তু সে সময় টেলিভিশনে দেওয়া খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য পুরো রাজনৈতিক হিসাব পাল্টে দেয়। খালেদা জিয়া কখনো অসংযত ভাষায় কথা বলেননি। তাঁর ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং বক্তব্য ভোটের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সেই কারণেই একাধিক আসনে প্রার্থী হয়েও প্রতিবারই তিনি জনগণের রায়ে বিজয়ী হয়েছেন। এই ধারাবাহিক সাফল্যই খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিণত করেছে এক অজেয় নির্বাচনী চরিত্রে যাঁর নামের পাশে আজও পরাজয়ের কোনো ইতিহাস নেই।

লেখক 

শাহারিয়া নয়ন

শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যম বিভাগ 
সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খালেদা জিয়ার হত্যার দায় থেকে হাসিনা কখনোই মুক্তি পাবেন না

২৩ আসনে ২৩ জয়: খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস

যে রাজনীতি মাথা নত করতে শেখেনি

খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে

টিকিটের চাহিদায় অতীতের সব রেকর্ড ভাঙল ২০২৬ বিশ্বকাপ

বেলারুশে পারমাণবিক ‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রাশিয়ার