বগুড়ায় নিষিদ্ধ ঘোষিত গাছের সাথে ঔষধি ও বনজ গাছ কেটে বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে সরকারি রাস্তার পাশের ১৩৬ টি গাছ বিক্রি করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। বিক্রি করা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের সাথে বনজ ও ওষধি গাছ মিলে দেড় শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি জানতে পেরে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গত শনিবার রাস্তার পাশের গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন।
আর বগুড়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেছেন,পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি রাস্তার গাছ বিক্রি এবং কাটার অনুমতি দিতে পারেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার পাশের ১৩৬ টি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ বিক্রি হওয়ার পর গাছ ক্রেতা স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা গত ১৫ দিনে দেড়শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের সাথে রাস্তার পাশে থাকা ওষধি গাছ হরিকতি, আমলকি ও বনজ মেহগনি গাছও কেটে বিক্রি করেন।
বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ন্যাংড়ার বাজার থেকে দরগাহাট রাস্তার দুই পাশের এইগাছ গুলি কাটা শুরু হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিকারপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরমান আকন্দের কাছে টেন্ডারের মাধ্যমে ঘোলাগাড়ি স্কুল থেকে এরুলিয়া ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ৪৩ টি ইউক্যালিপটাস ও ৯৩ টি আকাশমনি গাছ মাত্র চার লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাকিবুল ইসলাম শিপন ও আরমান আকন্দের নেতৃত্বে গত ১৫ দিন আগে থেকে সরকারি রাস্তার দুই পাশের গাছ কাটা শুরু করেন। গাছ কাটার কারন জানতে চাইলে তারা বলেন, এলজিইডি সরকারি এই রাস্তা সম্প্রসারন করবে। একারনে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ গুলো বিক্রি করা হয়েছে। গাছ কাটা প্রসঙ্গে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিপন বলেন, আমি রাজনৈতিক ভাবে অনেক নির্যাতিত। দলের নেতাকর্মীদেরকে চালানোর জন্য ব্যবসা করি।
এর আগেও বানদীঘি গ্রামের রাস্তার গাছ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিক্রি করা হয়েছে। আমরা সেই গাছ কিনতে পারিনি। এবার ঘোলাগাড়ি গ্রামের রাস্তার গাছ আমি এবং আমার দলের কর্মী আরমান আকন্দ বৈধ প্রক্রিয়ায় কিনেছি। আরমান আকন্দ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলে আমার কোন পদ নাই তবে আমি এবার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।
রাজনীতির পাশাপাশি আমি কাঠের ব্যবসা করি।টেন্ডারে ১৩৬ টি গাছ কেনা হয়েছে। তবে কাটার সময় শ্রমিকরা বুঝতে না পেরে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের সাথে কিছু গাছ ভুল করে কেটেছে। তবে সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। এরমধ্যে শনিবার থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুনএরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ হিসেবে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ কেটে অপসারনের সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত আছেন। তিনি আরো বলেন,শুধু বগুড়াতে না,সারাদেশে এই দুই প্রজাতীর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সে কারনে বগুড়াতেও টেন্ডারের মাধ্যমে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছে বিক্রি করা হয়েছে।
বন বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় থেকে গত ১৫ মে জারি করে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ নিষিদ্ধ করা হয়। এই গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমান পানি শোষন করে,যা মাটির আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এই গাছ গুলোর পাতায় এক ধরনের টক্সিন থাকে,যা মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে এবং নিচে অন্য গাছ জন্মাতে পারে না।
প্রজ্ঞাপন জারীর পর কৃষি বিভাগ ও বন বিভাগের মাধ্যমে নার্সারী গুলোতে এই গাছের চারা ধ্বংস করার কার্যক্রম শুরু করা হয়। পাশাপাশি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ অপসারনের জন্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া তৈরী করা হয়েছে।যা এখনও কার্যকর হয়নি। যার কারনে সরকারি রাস্তার পাশের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন বলে জানান বগুড়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান।
এদিকে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, সরকারি ভাবে এই গাছ গুলো নিষিদ্ধ করার পর আমরা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে নার্সারী গুলো গাছের চারা ধ্বংস করি। এজন্য নার্সারী মালিককে চারা প্রতি ৫ টাকা করে ভর্তুকি প্রদান করা হয়।
গাছ গুলো যেহেতু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর একারনে এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ গুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেন। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি মনি গাছের সাথে ওষধি ও বনজ গাছ কাটা অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সহকারি কমিশনার (ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকারকে সেখানে পাঠিয়ে সকল প্রকার গাছ কাট বন্ধ করে দিয়েছি।
মন্তব্য করুন