ভারতে কারারক্ষীকে পিটিয়ে পালিয়েছেন বাংলাদেশি বন্দি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার একটি কারাগারে একজন কারারক্ষীকে পিটিয়ে আহত করার পর পালিয়ে গেছেন অন্তত ৬ জন বন্দি। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরের কালিকাপুর সাব জেলে বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২ মিনিটের দিকে এই ঘটনা ঘটে।
কারাগার থেকে বন্দিদের পালিয়ে যাওয়ার এই ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। পলাতক ছয়জনের মধ্যে একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং বাকি পাঁচজনের বিচার চলছে বলে জানিয়েছেন ধর্মনগর মহকুমার শাসক এবং ওই সাব জেলের সুপার দেবযানী চৌধুরী।
তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, জামনগর সাবজেলের জেলারের কাছ থেকে একটি ফোনকল পেয়ে আমি ছুটে আসি। সাবজেলে এসে আমি সেখানে যে স্টাফরা উপস্থিত ছিল তাদের কাছ থেকে সব তথ্য নেই।
দেবযানী চৌধুরী বলেন, আমি তদন্ত শুরু করেছি। এসডিপিও ধর্মনগর ও নর্থের এসপিও পৃথক তদন্ত করছেন। বিএসএফ এবং সাব জেলের আশপাশের সব পুলিশ স্টেশনকে জানানো হয়েছে। আশপাশের সব সাবডিভিশনের পুলিশকেও সতর্ক করা হয়েছে, যাতে তাদের দ্রুত পাকড়াও করা যায়।
কারা কর্তৃপক্ষ যে তালিকা দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পালিয়ে যাওয়া কয়েদীদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নামে একজন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন, যিনি জাল কাগজপত্র রাখার অভিযোগে আটক ছিলেন। এদিকে, বিবিসির প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ধর্মনগর থানার পুলিশ জানায়, পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
আসামের নিলামবাজারের বাসিন্দা আব্দুল পাট্টা রাজ্য ছেড়ে পালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া করেছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। এখনো বাকি পাঁচ বন্দি নিখোঁজ আছেন।
• কীভাবে পালিয়ে গেলেন বন্দিরা?
জেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে গামছা জাতীয় একটি কাপড় নিয়ে পেছন থেকে এসে কারাগারের গেটে বসে থাকা কারারক্ষীর গলা পেঁচিয়ে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে আরও দুই জন বন্দি দৌড়ে এসে তাকে মারধর শুরু করে। পরে চার বন্দি মিলে কারারক্ষীকে মারতে থাকে এবং একজন কারাগারের গেট খুলে ফেলে।
এরপর আরেক জন কারারক্ষী এগিয়ে এলে দ্রুত পাঁচ জন বন্দি গেট দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ষষ্ঠজন গেটের পাশে একটি রুমে ঢুকে পড়ে। পরে একজন কারারক্ষী সরে গেলে রুম থেকে বেরিয়ে সেই ষষ্ঠ বন্দিও পালিয়ে যায়।
• পলাতক বন্দিদের পরিচয়
পলাতক বন্দিদের পরিচয় প্রকাশ করেছে জেল কর্তৃপক্ষ
১. নাজিম উদ্দিন। তিনি চুরি ও সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় জড়িত।
২. রহিম আলী। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (ফৌজদারি দণ্ডবিধি) বা বিএনএসের ৩৩১/৩০৯ ধারার অধীনে একটি মামলায় অভিযুক্ত।
৩. সুনীল দেববর্মা। খুনসহ গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।
৪. নারায়ণ দত্ত। বাংলাদেশের নাগরিক ও অবৈধ দলিলপত্র রাখার এক মামলায় জড়িত।
৫. রোজান আলী। দক্ষিণ কদমতলার জমির আলীর ছেলে, বিএনএসের ধারা ৩৩১/৩০৯ এর অধীনে একটি মামলায় অভিযুক্ত।
৬. আব্দুল পাট্টা। মাদক সংক্রান্ত এক মামলায় অভিযুক্ত।
কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, বন্দিরা প্রধান ফটকে রক্ষীদের পাশ কাটিয়ে জেল প্রাঙ্গণের ডান পাশের প্রাঙ্গণ প্রাচীরের দিকে পালিয়ে যায়। আহত কারারক্ষী বেদু মিয়া বর্তমানে ডিএমএন জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বিবিসি বাংলা।
মন্তব্য করুন