ভিডিও শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ধৈর্যকে জীবনসঙ্গী করার লাভ

ধৈর্যকে জীবনসঙ্গী করার লাভ

মানবজীবনের যাত্রাপথ সবসময় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে মসৃণ হয় না। নানা উপায়-উপকরণের এই দুনিয়ায় চলতে গিয়ে কখনো এমন সব বিপদ, বিপর্যয় ও বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, যেখান থেকে উত্তরণের কোনো দৃশ্যমান উপায় চোখে পড়ে না। তখন মনের ভেতর শুরু হয় অস্থির ছোটাছুটি, দুশ্চিন্তার উত্তাল তরঙ্গ আর হতাশার করাল ছায়া। মনে হয়- ‘আর কত ধৈর্য ধরব? এই মহা সংকট থেকে মুক্তি আদৌ সম্ভব কি?’

এটি কিন্তু ভয়ানক একটি ভুল ধারণা। কারণ, কঠিনতম সেই মুহূর্তেও মহান আল্লাহ তার বান্দার সঙ্গেই আছেন। যদি সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে। আল্লাহ তায়ালাই তাকে এমনভাবে বিপদমুক্ত করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, মুক্তির পথ ধৈর্যের ভেতরেই নিহিত। কোরআনে কারিমের বহু আয়াতে এ সত্য স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে।

সূরা আলে ইমরানের ২০০তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো।’ সূরা জুমারের ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ধৈর্যশীলদের প্রতিদান সীমাহীনভাবে প্রদান করা হবে।’

আবার সুরা বাকারার ১৫২ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।’

পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত ‘সবর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত রাখা বা থামিয়ে রাখা। পরিভাষায় এর অর্থ- নফসকে প্রকৃতির বিপরীতে দাঁড় করানো এবং আল্লাহর জন্য তা স্থির রাখা। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম (রহ.) ধৈর্যকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন-

আনুগত্যে অটল: আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ পালনে স্থির থাকা, তা যত কঠিনই মনে হোক না কেন।

পাপ থেকে বিরত থাকা: আল্লাহ ও রাসুল যা নিষেধ করেছেন, তা যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, তা থেকে বিরত থাকা।

আরও পড়ুন

বিপদে ধৈর্য ধারণ: বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য ধারণ করা।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ -সূরা বাকারা: ১৫৫

এ থেকে স্পষ্ট হয় যে দুনিয়া মূলত পরীক্ষা ও ধৈর্যের জায়গা। বিপদ-আপদ এখানে অপ্রত্যাশিত নয়, বরং স্বাভাবিক বাস্তবতা। মানুষের ঈমান যত দৃঢ়, পরীক্ষা তত কঠিন হয়।

তবে পরীক্ষা কখনো কামনা করা উচিত নয়, বরং মুমিন সর্বদা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তাই প্রার্থনা করবে। একইসঙ্গে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যের শক্তি দান করবেন। আর কোনো দান ধৈর্যের চেয়ে উত্তম নয়।’ -সহিহ বোখারি: ১৪৬৯

অতএব, মুমিন হতে হলে ধৈর্যকে জীবনসঙ্গী করতে হবে। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে প্রতিটি পরিস্থিতিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত পরীক্ষা হিসেবে মেনে নিতে হবে। জীবনের প্রতিটি সংকট, প্রতিটি সংগ্রাম, প্রতিটি আঘাতকে মোকাবিলা করার একমাত্র সঠিক পন্থা ধৈর্য।

আল্লাহর বান্দা হয়ে তার নির্দেশ মানা, পরীক্ষার সামনে অটল থাকা এবং ধৈর্যের ভেতরেই মুক্তির আলো খুঁজে পাওয়া। তাই আসুন! প্রত্যেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশিত ধৈর্যকে আঁকড়ে ধরি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার নন্দীগ্রামে ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা

তেঁতুলিয়ায় নীল আকাশের নিচে ডানা মেলতে শুরু করেছে অপরূপা কাঞ্চনজঙ্ঘা

ঐকমত্যের ভিত্তিতেই দেশের গণতন্ত্র ও সংস্কার কাজ এগিয়ে যাবে

বগুড়ার নন্দীগ্রামে শারদীয় উৎসবের আমেজ ঘরে ঘরে নাড়ু-মোয়া ও মুড়কির আনন্দ

জাতিসংঘের ভূমিকা মানবজাতির জন্য ইতিবাচক ও কল্যাণকরঃ প্রধান উপদেষ্টা

জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা