ভিডিও রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫

নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ করেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুরু হবে উৎপাদন

নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ করেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুরু হবে উৎপাদন

পাবনা প্রতিনিধি : চেরোনবিলের মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই, নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ করেই উৎপাদন শুরু হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-এমন দাবি কর্তৃপক্ষের। আনুষ্ঠানিক উৎপাদনের অপেক্ষায় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাশিয়ার কারিগরি সহযোগিতায় উত্তরের জেলা পাবনার রূপপুরে দীর্ঘ নির্মাণ যজ্ঞ শেষে এখন চলছে কমিশনিং এর কাজ।

সম্প্রতি রূপপুর প্রকল্পে নিয়োগ ও কাজের অদক্ষতা, অনিয়মের প্রশ্ন তুলে প্রকল্পটি ইতিহাসের ভয়াবহতম চেরোনবিল পরমাণু দুর্ঘটনার মতো বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমন প্রচারণায় বেড়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখানে চেরোনবিলের মতো দুর্ঘটনা ঘটার কোনই সুযোগ নেই।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচলনায় অদক্ষ ও প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ছাড়াই চিফ সুপারিন্টেন্ডেন্টসহ বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি তুলে চিঠি দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমও। অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও।

তবে প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, রোসাটম চিঠিতে প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়নি। চিফ সুপারিন্টেন্ডেন্ট এর দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণের কথা জানানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (ওঅঊঅ) থেকে পরবর্তী ধাপের লাইসেন্স নিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দক্ষতার শর্ত পূরণ না হলে পরবর্তী ধাপের লাইসেন্স পাওয়া অসম্ভব। ভিত্তিহীন প্রচারণায় প্রকল্পটি ঝুঁকিতে না ফেলারও আহবান জানিয়েছেন তারা। 

সম্প্রতি রূপপুর প্রকল্পে ভারপ্রাপ্ত চিফ সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে পদোন্নতি পান মুশফিকা আহমেদ। দুদকে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়েছে, মুশফিকা ২০১৯ সালে ‘কেমিক্যাল অ্যান্ড রেডিওঅ্যাকটিভ ওয়েস্ট ম্যানেজার’ পদে অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পান। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা রেডিয়েশন মনিটরিংয়ে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা আবশ্যক ছিল।

নিয়োগবোর্ডে থাকা এক কর্মকর্তার সাথে আত্মীয়তার সুবাদে মুশফিকা চাকরি পেয়েছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে চিফ সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিয়োগের এক বছরের মধ্যে বিশেষায়িত তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ, কর্ম অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। কিন্তু, মুশফিকা এসব শর্ত পূরণ ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মুশফিকা ছাড়াও প্রকল্পের মেকানিক্যাল বিভাগের ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক রবিউল আলম প্রয়োজনীয় তিন বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। একই সময় ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পাওয়া আল মামুন ও একেএম নাজমুল হাসান কারোরই বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া নয় বছরের অভিজ্ঞতা পূর্ণ ছিল না।

আরও পড়ুন

২০২৩ সালে ভবিষ্যৎ ভৌত সুরা ব্যবস্থাপনা পদে আবু কায়সারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের আবশ্যক শর্ত হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সাত বছরের অভিজ্ঞতা তার ছিল না। এছাড়া সিভিল বিভাগের উপব্যবস্থাপক মেরাজ আল মামুনসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে।

তবে দুদকে পাঠানো অভিযোগ ভিত্তিহীন, অসত্য ও প্রকল্পকে বিতর্কিত করার চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রথম নির্মিত হচ্ছে। এমন প্রকল্পে বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া শর্তের শতভাগ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের পর রাশিয়া ও বাংলাদেশে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন যা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কমিশনিং এর পূর্ব শর্ত হিসেবে ওঅঊঅ এর প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণে প্রাক উৎপাদন নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ চলমান, যা সন্তোষজনক হলে ফিজিক্যাল স্টার্ট আপ শুরু হবে। এ সময় পরিকল্পিতভাবে অযৌক্তিক প্রশ্ন তুলে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এদিকে অস্থায়ীভাবে চিফ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মুশফিকা আহমেদ তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, তার নিয়োগের সময় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ম্যানেজার (রাসায়নিক ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য) পদে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ ছিল।

তিনি পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি এবং এমএসসি ডিগ্রিধারী। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে যোগদানের আগে তিনি ঢাকার একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে প্রধান পদার্থবিদ ছিলেন। সেখানে বিকিরণ নিরাপত্তা, রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির চিকিৎসা প্রয়োগ নিয়ে কাজ করেছেন। যা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীর মধ্যে ছিল।

শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক মানদন্ড এবং ওঅঊঅ নির্দেশিকায় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পদার্থবিদদের সম্পৃক্ততা স্বীকৃত ও প্রচলিত। আমার একাডেমিক যোগ্যতা বিজ্ঞপ্তির শর্তের সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্বজনপ্রীতির অভিযোগও অনুমাননির্ভর। প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়, পরমাণু শক্তি কমিশন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক এবং এনপিসিবিএলের প্রতিনিধিদের কমিটি লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক সাক্ষাৎকার এবং যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি রাশিয়ায় রোসাটম টেকনিক্যাল একাডেমিতে তেরো মাসেরও বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছি।

চীফ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে। মুশফিকা আরও বলেন, তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের যে ঘাটতির কথা বলা হয়েছিলো, সে বিষয়ে রোসাটমের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাত সপ্তাহের প্রশিক্ষণও ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন : এজিএস পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পাঁচ প্রার্থী, কৌশল নাকি অসন্তোষ?

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ করেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুরু হবে উৎপাদন

রংপুরের মিঠাপুকুরে একটি মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবনে চলছে ক্লাস

বগুড়ার কাহালুতে ফাঁস দিয়ে নারীর আত্মহত্যা