৪৫ বছরেও হয়নি প্রশস্ত
নওগাঁ-আত্রাই সরু সড়কে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ থেকে রাণীনগর-আত্রাই উপজেলা হয়ে নাটোর যাওয়ার আঞ্চলিক সড়ক হিসেবে পরিচিত নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই সড়কটি। নওগাঁ শহরের কাঁঠালতলী মোড় থেকে আত্রাই উপজেলা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ কিলোমিটার।
রেল লাইন সংলগ্ন নওগাঁ-নাটোর জাতীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত এই সড়কটি নওগাঁ থেকে নাটোর যাতায়াতে প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহার হতো। আবার আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার জনগণ এই সড়ক দিয়ে বগুড়া যাতায়াত করতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশির দশকের আগে সড়কটি ছিলো ইটের সোলিং করা। সাধারণ লোকজনের যাতায়াতের পাশাপাশি কৃষকরা গরুর গাড়িতে করে কৃষিপণ্য নিয়ে নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ অন্যান্য স্থানে এই রাস্তা দিয়ে যেতেন। পরবর্তী সময়ে সড়কটি এলজিইডি’র আওতায় আসার পর বিদ্যমান অবস্থাতেই পাকাকরণ করা হয়।
এক দশক আগে সড়কটি চলে যায় সড়ক বিভাগের আওতায়। কিন্তু সড়কটি আর প্রশস্তকরণ হয় না। সড়কটি অনেক মরণ ফাঁদখ্যাত বাঁকের জন্য বিখ্যাত। এক সময় এই সড়ক দিয়ে বাস চলাচল করতো। সড়কটি পুরাতন হওয়ার কারণে দু’পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে জনবসতি, হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র ও অসংখ্য ধানের চাতাল। নওগাঁ সদর, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রামের লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত এই সড়ক দিয়েই চলাচল করে।
দুই দশকে তিন উপজেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০ লাখ। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ছোট-বড় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুন। সড়কের অধিকাংশ স্থানের প্রশস্ততা ১০-১২ ফিট। বিভিন্ন সময়ে সড়কের গুরুত্ব অনুসারে ২-৩ ফিট প্রশস্ত করা হলেও যানবাহনের ধারণক্ষমতার জন্য তা খুবই নগণ্য।
যার ফলে অনেক সরু জায়গায় এক সঙ্গে দুইদিক থেকে আসা ছোট ও বড় গাড়ি পারাপার হতে গিয়ে উল্টে যাওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ৯০ ডিগ্রির সরু মোড়ে গিয়ে পারাপার হওয়ার সময় অজান্তেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সময়ের তুলনায় সড়কটি প্রশস্তকরণ না করায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা, খালি হচ্ছে অনেক মায়ের কোল। নওগাঁ থেকে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার দূরত্ব কম হওয়ার কারণে এই সড়ক দিয়েই পথচারীরা বেশি চলাচল করে এবং পণ্য পরিবহণ করে থাকেন। সড়কের কাঁঠালতলী মোড় থেকে রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী বটতলা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ নওগাঁ সড়ক বিভাগের আওতায়।
আরও পড়ুনআর সড়কের রাণীনগর উপজেলার নগরব্রিজ থেকে আত্রাই উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার ছোট যমুনা নদীর বেরিবাঁধ। তাই বেরিবাঁধের অংশ নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। যার ফলে একই সড়কের দপ্তর দুইটি হওয়ায় সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে নানা জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ধরে সড়কটি প্রশস্তকরণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানগণ।
তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি প্রশস্তকরণের মাধ্যমে আধুনিয়কায়ন করতে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর রবাবর দাপ্তরিক ভাবে যোগাযোগ শুরু করেছেন রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, “রক্তদহ-লোহচূূড়া বিল নিষ্কাশন স্কীম” প্রকল্পের আওতায় ৩৫.০০কি:মি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী নামক স্থান হতে আহসানগঞ্জ কলেজ মোড় পর্যন্ত নওগাঁ-আত্রাই সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাঁধটির দুর্বল স্থানগুলো মেরামত করা হয়েছে, তবে বাঁধটিতে ভূমি অধিগ্রহণ না থাকায় বাঁধ প্রশস্তকরণ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যেই ২৮ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজ অর্ন্তভূক্ত করে ডিপিপি প্রেরণ করা হয়েছে। ডিপিপিটি অনুমোদিত হলে কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন এই কর্মকর্তা।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান জানান, তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের জন্য এই সড়কটি কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা প্রকাশের ভাষা নেই। সময়ের তুলনায় সড়কটি এতই সরু যে বড় আকারের একটি গাড়ি চলাচল করাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
এই অঞ্চলের জনপদের সার্বিক উন্নয়ন ও এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানে আমূল পরিবর্তন আনতে হলে এই সড়কটির প্রশস্তকরণের মাধ্যমে আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই। এমন বিষয়টি উপলব্ধি করে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বরাবর প্রশস্তকরণের জন্য দাপ্তরিক ভাবে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এমন কাজে উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করতে সর্বদাই প্রস্তুত আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন