ভিডিও শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কোটি কোটি টাকা

বগুড়ায় ১৬৬ হাট-বাজার কম মূল্যে ইজারা

বগুড়ায় ১৬৬ হাট-বাজার কম মূল্যে ইজারা। ছবি সংগৃহীত

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোর মধ্যে অনেকগুলো চলতি বছর ইজারা হয়নি।  জেলার ২৩১ হাটের মধ্যে ইজারা না হওয়া ৬৫টি হাট থেকে সরকার অতিরিক্ত কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। বগুড়ার বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী হাট গুলোর মধ্যে মহাস্থান হাট অন্যতম। এই হাট এবার ইজারা হয়েছে সাত কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। যা গত বছরের চেয়ে এক কোটি ১৭ লক্ষ টাকা কম।

একইভাবে নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর হাট এবার ইজারা হয়েছে এক কোটি ৮৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়; এই হাটও গত বছরের চেয়ে ৭০ লক্ষ টাকা কম ইজারা হয়েছে। বগুড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাট হচ্ছে দুপচাঁচিয়া উপজেলার ধাপ সুলতান হাট। এই হাটটি এবার কাঙ্খিত দর না পাওয়ায় ইজারা হয়নি। একই ভাবে বগুড়া শহরের মধ্যে অন্যতম এবং ঐতিহ্যবাহী সুরতানগঞ্জ হাট এবারও ইজারা হয়নি।

গুরুত্বপূর্ণ হাটগুলো ইজারা না হওয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব হারাচ্ছে। এদিকে সিন্ডিকেটের কারণে হাটগুলো ইজারা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। হাট ইজারার দরপত্রে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কম মূল্যে দরপত্র দাখিল করায় ইজারা কর্তৃপক্ষ ইজারা দিতে পারেনি। তবে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ইজারা না পেলেও কৌশলে তারা ওই হাট বাজার গুলোর খাস আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলার ২৩১টি হাটের মধ্যে ৬৫ টি হাট-বাজার দরপত্র আহবান করেও ইজারা দেয়া যায়নি। হাট-বাজার ইজারার পিছনে জেলায় এবার বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করে গত বছরের তুলনায় কম মূল্যে ইজারা নিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তবে যারা ইজারা পেয়েছেন তাদের মতে গত তিন বছরের মূল্য গড় হিসেবে সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যার কারণে এবার ইজারা মূল্য কম হয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর হাট ইজারা নিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তারেক। তিনি বলেন, গত বছর অধিক মূল্যে হাট ইজারা নিয়ে ইজারাদার হাটে আগত ক্রেতা বিক্রেতার কাছে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করেছেন। এবার ইজারা মূল্য কম মনে হলেও গত তিন বছরের গড় হিসেবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ হাজার টাকা বেশি আছে। তবে তিন বছরের গড় হিসেবে আগামী বছর ইজারা মূল্য বেড়ে যাবে।

একই ধরনের কথা বলেছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানু। তিনি বলেন, দরপত্রে গত তিন বছরের ইজারা মূল্য গড় করে প্রতিটি হাটের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সরকারি মূল্যের কমে কোন হাট ইজারা দেয়া হয়নি। এবছর নন্দীগ্রাম উপজেলায় সরকারি মূল্য না পাওয়ায় ৮টি হাট ইজারা দেয়া হয়নি।

মহাস্থান হাটের ইজারাদার আবু তালেব বলেছেন, গত কয়েক বছর কালো টাকার মালিকদের হাতে হাট ছিল। কালো টাকার মালিকরা টাকা সাদা করতে হাট গুলোতে বিনিয়োগ করেছেন। যার কারণে তারা অনেক বেশি টাকায় হাট-বাজার ইজারা নিয়েছেন। ইজারা মূল্যের সাথে ভ্যাট ও উৎসে কর দিতে হয় শতকরা ২৫ ভাগ। এভাবে তারা  কালো টাকা সাদা করে নিয়েছে। চড়া মূল্যে হাট ইজারা নিয়ে জনগণের উপর বাড়তি খাজনা চাপিয়ে দিয়েছিল ওই সব কালো টাকার মালিকরা।

আরও পড়ুন

এবার তারা উধাও হয়ে গেছে। যার কারণে হাট-বাজার ইজারায় প্রতিযোগীতা কম এবং ইজারা মূল্য কম মনে হচ্ছে। এদিকে অর্থনীতিবিদ বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রায়হান ইসলাম বলেছেন, এভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নাই। তবে অপ্রদর্শিত টাকা হাট-বাজার ইজারায় বিনিয়োগ করে ভ্যাট এবং কর সরকারকে প্রদান করার মধ্য দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগ আছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলা এবং ১২টি পৌরসভায় হাট-বাজার রয়েছে ২৩১টি। চলতি বাংলা ১৪৩২ সনের জন্য উপজেলা ও পৌরসভা থেকে হাটবাজার ইজারার জন্য তিন দফা টেন্ডার আহবান করা হয়। টেন্ডারে গত তিন বছরের গড় হিসেবে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ১৬৬ টি হাট-বাজার ইজারা দেয়া সম্ভব হয়।

১৬৬টি হাট-বাজার থেকে ৩৮ কোটি ৮৭ লক্ষ ৩০ হাজার ২৫৭ টাকা রাজস্ব আসবে। আর সরকারি খাতে ভ্যাট এবং উৎসে কর আসবে ৯ কোটি ৪৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ২০৮ টাকা। বাকী ৬৫টি হাট-বাজার সরকারি নির্ধারিত মূল্য না পাওয়ায় ইজারা দেয়া যায়নি। একারণে  সরকারি ভাবে খাজনা আদায় (খাস কালেকশন) শুরু করা হয়েছে।

বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার আওতাভূক্ত ৭টি হাট বাজার ইজারা হয়নি। সুলতানগঞ্জ হাট, রাজা বাজার, কালিতলা হাট, ফতেহআলী বাজার (তরকারি সেড ব্যাতিত), ফুলবাড়ি বাজার, গোদারপাড়া বাজার ও শটিবাড়ী হাট। এই হাটবাজার গুলোতে গত ৩ বছরের গড়ের চেয়ে ইজারা মূল্য কম হওয়ায় হাটবাজার গুলো ইজারা হয়নি। তবে এই হাট বাজার গুলো ইজারা না হলেও খাস আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যদের।

ফলে পৌরসভার কাঙ্খিত রাজস্ব পাচ্ছে না। যে খাস আদায় হচ্ছে তার মধ্যে থেকে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে হাট বাজার থেকে পৌর সভার আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বগুড়া পৌরসভার বাজার ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই জানান, ইজারা না হওয়ায় খাস আদায় করা হচ্ছে। তবে পৌরসভা সরাসরি আদায় না করে অন্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন এতে আদায়ের পরিমাণ ইজারা মূল্যের কাছাকাছি হচ্ছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, দরপত্র আহ্বান করা হলে বেশ কিছু হাটে কেউ দরপত্র দাখিল করেননি। আবার কোন হাটে সরকারি নির্ধারিত মূল্য কোন দরদাতা দাখিল করেননি। যার কারণে ৬৫ হাট ইজারা দেয়া যায়নি। হাট গুলো স্থানীয় ভাবে খাস খাজনা করতে হচ্ছে। যা স্থানীয় প্রশাসনের জন্য অতিরিক্ত চাপ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা

সবাই মিলে কিশোরগঞ্জকে আমরা নান্দনিক ও গ্রীন-ক্লিন করবো

বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ঈসার দাফন সম্পন্ন

নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা-অপরাধে সাজা বাড়ছে

তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে রংপুরে কাবাডি খেলায় গঙ্গাচড়া মডেল স্কুল চ্যাম্পিয়ন

নারায়ণগঞ্জে ৪ শতাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো তিতাস