ভিডিও শনিবার, ১০ মে ২০২৫

পাহাড়ে কেএনএফ’র অপতৎপরতা

পাহাড়ে কেএনএফ’র অপতৎপরতা

বান্দারবানের রুমার গহীন জঙ্গলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফন্টের (কেএনএফ) তিনজন সদস্য নিহত হয়েছেন। গত রোবরার আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর) গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তথ্য মতে, বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহীন জঙ্গলে সেনাবাহিনীর অভিযানে কেএনএফ’র গোপন আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিন কেএনএফ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এ সময় অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলমান আছে বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর।

গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখায় চার শতাধিক সদস্য পাহাড়ে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত। এসএমজি, চায়নিজ রাইফেল, একে-৪৭, বার্মিজ একনালা বন্দুকসহ তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তিনশ’র বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি সহ গহিন অরণ্যে তাদের বিচরণ। রাঙামাটির বিলাইছড়ির পাশাপাশি মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে তাদের শক্ত ঘাঁটি।

এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া কেএনএফ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশ। গত ৫ আগস্ট কেএনএফ তাদের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে হুমকি দিয়ে বলেছে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাহাড়কে অচল করে দেওয়া হবে। এভাবে তারা সেখানে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, সশস্ত্র এই সংগঠনের সদস্যরা চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, সশস্ত্র হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে পাহাড়কে অশান্ত করে তুলছে।

সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে পার্বত্য তিন জেলার পর্যটন ব্যবসাসহ সবধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও জনজীবন হুমকির মুখে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে কেএনএফ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র বলছে, পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র কেএনএফ ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয়। ২০১৬ সাল থেকে তারা পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে অপতৎপরতা শুরু করে। ২০২২ সালে তারা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (সামরিক শাখা) গঠন করে। গত দুই বছর পাহাড়ি এলাকায় অন্তত ৯টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে কেএনএফ।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের হাতে নিরস্ত্র বাঙালি নাগরিক হত্যা, মসজিদ-মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট বন্ধ ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এসময় সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত সকল সন্ত্রাসীদের চিহ্নিতকরণ, অস্ত্র উদ্ধার করে আইনের আওতায় আনা এবং সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধিসহ বারদফা দাবি জানান তারা।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্টুডেন্টস ফর মডারেন্টি ব্যানারে এ মানববন্দন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ ও ভারতকে দায়ী করে স্লোগান তোলেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি সমূহ হলো-

আরও পড়ুন

১. পাবর্ত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

২. সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সেনাবাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা জায়গাগুলোতে সেনাক্যাম্প বাড়াতে হবে।

৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির অসাংবিধানিক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, নানা অজুহাত তুলে অতর্কিত হামলা করে নাটক সাজিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তরা জুমল্যান্ড বানাতে চায়। পাহাড়ের অধিকার যেমন সমতলে রয়েছে তেমনি সমতলের অধিকার পাহাড়ে রয়েছে। সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ভারতের মদদে পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে নানা সেক্টরে অস্থিতিশীল তৈরির অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক এসব সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী তৎপরতা ও তাদের সেই চক্রান্তেরই ধারাবাহিকমাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা যারা করছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা। তারা আরও বলেন, তাদের এই খেলা নতুন নয়। তারা এটা শুরু করেছে ১৯৭৩ সাল থেকে।

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে সকল সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সেনা তৎপরতা বাড়াতে হবে। প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলো পুন:স্থাপন করতে হবে। পাহাড়ে সাম্প্রতিক অশান্ত পরিস্থিতির পেছনে যারাই থাকুক, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উচ্চগতির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে পাকিস্তান : ভারত

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

কুড়িগ্রামে বাড়ির পাশ থেকে স্কুলছাত্রীর মরদেহ

রিয়ালে আসছেন আলোনসো, হবে তিন বছরের চুক্তি

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কমিটির বৈঠক ডেকেছেন শেহবাজ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতেই হবে : হাসনাত