রংপুর অঞ্চলের মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ১১ মাসে নিহত ২১৩
রংপুর প্রতিনিধি : রংপুর অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন উদ্বেগজনক আকার ধারণ করছে। হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিয়নের আওতাধীন সড়কগুলোতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত ৪১০টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২১৩ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪৬৪ জন, যাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে রয়েছেন। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় এ সময়ের মধ্যে ১৯০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, রংপুর রিজিয়নের আওতায় রয়েছে মোট ৩৭৩ কিলোমিটার মহাসড়ক এবং ১৩৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক। এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাপ, সড়কের কিছু অংশের নাজুক অবস্থা এবং চালকদের বেপরোয়া আচরণের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার আবু তোরাব শামছুর রহমান জানান, রিজিয়নের আওতায় তেঁতুলিয়া, বোদা, সাতমাইল, তারাগঞ্জ, বড়দরগা, গোবিন্দগঞ্জ ও হাতীবান্ধা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের থানা রয়েছে। এসব থানার অধীন সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত টহল, যানবাহন তল্লাশি ও আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি চালক ও যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ এবং বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই সাথে সচেনতা বাড়াতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের সড়ক আইন সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অধিকাংশ দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া ও অদক্ষ চালনা, ট্রাফিক আইন অমান্য, ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এবং উৎসবকেন্দ্রিক যাত্রার সময় দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।
স্থানীয় যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়কে নিয়মিত নজরদারি থাকলেও চালকদের একাংশ আইন মানতে অনীহা দেখাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ চালকের অভাব, বিশ্রাম ছাড়া দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানো এবং যান্ত্রিক ত্রুটিও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে। তারা মনে করেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, চালকদের মানবিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করাও জরুরি। বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক দিয়ে যানবাহন পরিচালনা এবং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানোর প্রবণতা বন্ধ না হলে এই মৃত্যুমিছিল থামবে না।
আরও পড়ুনহাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ভবিষ্যতে নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। দুর্ঘটনা কমাতে গতি নিয়ন্ত্রণ, ফিটনেসহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন








