দুর্গম চরাঞ্চল প্রতারণার নতুন ফাঁদ : ফুঁ ও পানিপড়া দিয়েই বন্ধ্যাত্ব সারছেন জামাল!
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের চিকিৎসা করেও যাদের সন্তান হচ্ছে না, তাদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জামাল শেখ নামে এক কবিরাজ। তাদের শুধুমাত্র এক বোতল পানিপড়া কিংবা একটু ফুঁ দিলেই নাকি পেটে সন্তান আসছে এমন কথা বলছেন ওই কবিরাজ। প্রাথমিক জমা ৫০০ টাকা, সন্তান হওয়ার পর দিতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। এদিকে এমন মিথ্যা প্রচার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় তার পানিপড়া নিতে প্রতিদিন শতশত মানুষ ভিড় করছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের বেড়াপাঁচবাড়িয়া গ্রাম। এ গ্রামের কবিরাজ জামাল শেখ গত এক বছর ধরে এভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রতারণা। এক বোতল পানিপড়ায় নাকি নানা ধরনের রোগ ভালো হচ্ছে, এ বিশ্বাসে তার বাড়িতে প্রতিদিন শতশত মানুষের উপচেপড়া ভিড়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
তার পানিপড়ায় নাকি বন্ধা নারীদের পেটে সন্তান আসছে। সন্তানের আশায় প্রথমে গুণতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। তারপর সন্তান হলে দিতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। অন্ধ বিশ্বাসে জামাল শেখের বাড়িতে বগুড়া, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসছেন শতশত অন্ধবিশ্বাসী মানুষ। জামাল শেখের ছেলে জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতশত নারী-পুরুষ এখানে পানিপড়া নিতে ছুটে আসেন। তার বাবা নাকি স্বপ্নে এ আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন।
জামাল শেখের দাবি, প্রায় দেড় বছর আগে স্বপ্নে তাকে ১৫ পাড়া কোরআন পড়ে শুনানো হয়। তারপর স্বপ্নেই আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করা হয়। তাকে বলা হয় তুমি যেকোনও নিয়ত করে একটু ফুঁক দিও। তারপর জামাল একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে ফুঁ দিলে রোগীটি ১০ মিনিটের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় বলে দাবি করেন। ওই ব্যক্তি এক নারীর কাছে এ বিষয়ে জানান।
ওই নারীর ১৫ বছর বিয়ের পরেও কোনও সন্তান হচ্ছিল না পরে তিনি তার কাছে এসে পানিপড়া নিলে তার পেটে সন্তান আসে বলেও জামাল দাবি করেন। এভাবে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। তার চিকিৎসায় এখনো ১০টি বাচ্চা প্রসব হয়েছে। অসংখ্য নারী গর্ভবতী হয়েছেন বলেও দাবি তার।
স্ত্রী’র জন্য পানিপড়া নিতে আসা ফরিদ নামে এক ব্যক্তি জানান, ১৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন, এখনো কোনও সন্তানাদি হয়নি। লোকমুখে এই কবিরাজের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা জানতে পেরে তিনি পানিপড়া নিতে এসেছেন। এজন্য প্রথমে ৫০০ টাকা জমাও দিয়েছেন। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ার কয়েক মাস পর আরও ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে তিনি জানান।
কাজলা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। এলাকার মানুষ ভালো কোনও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বিভিন্ন ধরনের কবিরাজের কাছে যান এবং প্রতারিত হন। চরাঞ্চলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা চালু হলে এ সমস্যা আর হবে না।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম বলেন, ঝারফুঁক কবিরাজী চিকিৎসার সাথে মেডিক্যাল চিকিৎসার কোনও সম্পর্ক নেই। এটি ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা এবং কুসংস্কার থেকেই হয়ে থাকে। যারা একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ে বসবাস করেন এবং যাদের মধ্যে এখনো শিক্ষার আলো পৌঁছেনি তারাই এ ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়।
মন্তব্য করুন







