এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যে নির্বাচন ব্যাহত হবে : মির্জা ফখরুল
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে একটা নির্বাচনের আবহ সৃষ্টি হয়েছে এবং কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে অথবা মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে তিনি প্রতিহিংসা ভুলে একটি সুন্দর, ভালোবাসার দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির হলরুমে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা যথেষ্ট উপযোগী রয়েছে। ভালো আছে।
কারণ এখন আর এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যেখানে নির্বাচন ব্যাহত হবে। সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বড় দল হিসেবে একাধিক প্রার্থীর প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। এটা একটা স্রোতস্বিনী নদীর মতো। এখানে ৪-৫টা করে ক্যানডিডেট থাকে, কিছুতো সমস্যা হবে। এটা বরাবর হয়ে আসছে, কোনো সমস্যা নেই। এটা হওয়া মানেই হচ্ছে বোঝা যায় যে-এটি একটি বড় রাজনৈতিক দল।
প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত ছয়টি কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তনের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা ট্রানজেকশন পিরিয়ডে আছি।
ফ্যাসিজম, কর্তৃত্ববাদী একটা অবস্থা থেকে ডেমোক্রেসি ট্রানজেকশন অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য আমরা রেডি হচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট এই ব্যবস্থা নতুন হলেও, রাজনৈতিক দলগুলো আপাতত একমত হয়েছে এই কারণে যে, এটি ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ তৈরি করবে এবং নিম্ন কক্ষকে এককভাবে ক্ষমতাসীন হতে দেবে না।
তিনি আরও বলেন, একটা ব্যক্তি যদি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকে তাহলে দেখা যায় যে সে কর্তৃত্ববাদী হয়ে যায়...এক্ষেত্রে আমরা একমত হচ্ছি যে, দুই ট্রামের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ব্যক্তিগত কষ্টের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর রাজনৈতিক জীবনে... মনে হয়েছে আমি যদি আইনজীবী হতাম এতটা অত্যাচার আমার ওপর হতো না।
তিনি আশা না ছাড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ। আমি জেলের পর জেলে গিয়েছি। ১৫ বছর কষ্ট করেছি কিন্তু আশা ছাড়িনি...আমি এটা বিশ্বাস করি আমি যদি লড়াই করি, চলতে থাকি তাহলে নিঃসন্দেহে একদিন না একদিন বিজয় আসবেই।
নতুন প্রজন্মের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এনসিপি ছেলেদের একটি দল হয়েছে। ইয়াং বয়েজ। আমাদের উচিত এ ধরনের ইয়াং ছেলেদেরকে স্বাগত জানানো। কারণ আমাদের পরে নিউ জেনারেশন দরকার হবে, যারা প্রকৃত অর্থে দেশকে কিছু দিতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘সমঝোতার মানুষ’ সমালোচনার জবাব দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আমার সবচেয়ে বড় সমালোচনা হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এসময় মির্জা ফখরুল প্রশ্ন করেন, আর কতদিন যুদ্ধ করব? আর কতদিন মারামারি করবো, আর কতদিন আমরা হিংসা, খুন, জখম এসবের মধ্যে থাকব? আমাদের একটা জায়গায় আসা উচিত, এতে আমাদের সমাজটাকে আমরা একটা শান্তির মধ্যে নিতে পারব।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর কারাবন্দি খালেদা জিয়ার প্রথম প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ম্যাডাম জিয়া অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও যে ছোট্ট ড্রাফটে তার সংশোধনী বসিয়েছিলেন, তার প্রথম লাইনটি ছিল: ‘প্রথম রাইটটা লেখবা এখন আর কোনো প্রতিহিংসা নয়, প্রতিশোধ নয়।’ মির্জা ফখরুল বলেন, দেখেন কত উঁচু মনের নেতা। এত ভয়াবহ ঘটনা, প্রায় দুই হাজার ছাত্র, নারী, শিশু নিহত হয়েছে। ছয় বছর ধরে জেলে।
প্রথম কথাই বললেন ‘আর কোনো প্রতিহিংসা নয়। প্রতিশোধ নয়। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর ভালোবাসার দেশ গড়বো।’ তিনি এটিকে নেলসন ম্যান্ডেলার মতো নেতাদের কণ্ঠস্বর উল্লেখ করে ‘ইউনিক’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মকদুম সাব্বির মৃদুল, পিপি মো. আব্দুল হালিম, নারী শিশু আদালতের পিপি এন্তাজুল হক, ইউসুফ আলীসহ অন্যান্য আইনজীবী।
মন্তব্য করুন







