ডাকসুর উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান, ক্যাম্পাসে ফিরছে স্বস্তি
ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন থাকা অস্থায়ী দোকান,ভবঘুরে, ও পাগলদের উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। বেশ কয়েকদিন ধরেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি, মোকাররম ভবন ও কলাভবনসংলগ্ন এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়েরের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর কার্যকরী সদস্য সর্বমিত্র চাকমা, ছাত্রপরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ সহ বিভিন্ন হলের ভিপি, জিএস ও ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। অভিযান চলাকালে টিএসসি সংলগ্ন চায়ের দোকান, বেআইনি খাবারের স্টল, এবং ফুটপাত দখল করে থাকা বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান সরিয়ে ফেলা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এসব স্থানে পুনরায় দখল বা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন ডাকসু নেতারা।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলাচল ও পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল এসব অবৈধ দোকান ও দখলদারদের কারণে। আমরা চাই ক্যাম্পাস শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক থাকুক, ব্যবসায়ীদের দখলমুক্ত হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ডাকসুর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রশাসনও চাইছে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসু যৌথভাবে এমন অভিযান অব্যাহত রাখবে।”
অভিযানের পর ক্যাম্পাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শিক্ষার্থীরা। কলা অনুষদের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, “টিএসসি এলাকায় হাঁটা বা বসার জায়গা পাওয়া দুষ্কর হয়ে গিয়েছিল। আজকের অভিযানে অনেক জায়গা ফাঁকা হয়েছে, ভালো লাগছে।”তিনি আরো বলেন সুফিয়া কামাল হল থেকে আসার সময় বিভিন্ন ভবঘুরে, পাগল ও টিএসসি মেট্রোস্টেশনের কাছে এত হৈ চৈ ভীড় ঠেলে ক্লাসে যাওয়া আমাদের জন্য দুস্কর। এখন পরিবেশ অনেকটাই ভালো।
আরও পড়ুনইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তুলি জানান, ক্যাম্পাসে আসার পর আমরা দেখছি এখানে বিভিন্ন বহিরাগত ও পাগল ঘুরে বেড়াত। তাদের হাতে অস্ত্র ও মাদক ও থাকতো কিন্তু ডাকসু নেতারা ইদানিং এদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে এটা সত্যি আমাদের জন্য স্বস্তির।সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন ডাকসুর অন্যতম কাজ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা। আর মাদক কারবার, পাগল, ভবঘুরে এবং যত্রতত্র অবৈধ দোকান মুক্ত একটা নিরাপদ, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী-বান্ধব পরিবেশ শিক্ষার্থীদের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার নিশ্চিত করতেই প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছি আমরা, প্রশাসনকে সহায়তা করছি।
আর এই উচ্ছেদ অভিযান নতুন কিছুও না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম প্রায়শই এরকম অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়৷ ডাকসু হওয়ার পরে আমরা জাস্ট শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছি। প্রশাসনকে সহায়তা করছি। কারণ ব্যাপারটা সরাসরি আমাদেরই অধিকার সংশ্লিষ্ট।
কিন্তু নিরাপদ ক্যাম্পাস পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই নানা মহলকে দেখতে পাচ্ছি উঠেপড়ে লেগেছে ডাকসুকে বিতর্কিত করতে, আমাদেরকে বিতর্কিত করতে। নানাধরণের মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে, মিথ্যা ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, আমরা কোনো অন্যায় কাজ করছি না। শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মানে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এবং কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনও পাচ্ছি। এটাই আমাদের বড়ো প্রাপ্তি। এবং এই প্রাপ্তি সহকারেই একটা সুন্দর, নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মানে আমরা কাজ করে যাব।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকান, খাবার স্টল, পাগল ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ করে ডাকসু নেতারা। ডাকসুর এই উচ্ছেদ অভিযানের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা হিসেবে এটি প্রশংসা কুড়িয়েছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের কাছে।
মন্তব্য করুন










