তায়াম্মুম করার নিয়ম

প্রশ্ন: তায়াম্মুমের নিয়ম কী? তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি ও কী কী? তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি ও কী কী?
উত্তর: তায়াম্মুমের নিয়ম হলো প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করবেন অর্থাৎ মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবেন, ‘পানি না পাওয়ায় বা পানি ব্যবহার করতে না পারায় অজু/গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করছি’। তারপর বলবেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’।
তারপর পবিত্র মাটি বা মাটিজাতীয় কোনো কিছুতে (যেমন বালু, পাথর, চুন ও সুরমা) মোট দুইবার হাত লাগাবেন, প্রথমবার হাত লাগানোর পর হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করবেন, দ্বিতীয়বার কুনুই পর্যন্ত উভয় হাত মাসাহ করবেন।
তায়াম্মুমের জন্য মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুতে হাত দেওয়ার পর হাতে ধুলা-বালু লাগার প্রয়োজন নেই; বরং হাতে বেশি ধুলাবালু লাগলে মাসাহ করার আগে তা ঝেড়ে ফেলবেন। মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুর এক জায়গায় বারবার হাত লাগিয়ে তায়াম্মুম করা যায়। তায়াম্মুমের জন্য প্রত্যেকবার নতুন নতুন জায়গায় হাত লাগানো জরুরি নয়।
তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি
১. নিয়ত করা।
২. মুখমণ্ডল মাসাহ করা।
৩. কুনুই পর্যন্ত হাত মাসাহ করা।
এই তিনটি ফরজ পালন করলেই তায়াম্মুম হয়ে যায়।
তায়াম্মুমের সুন্নত ছয়টি
১. তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া।
২. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল ও পরে হাত মাসাহ করা।
আরও পড়ুন৩. মুখমণ্ডল ও হাত মাসাহ করার মাঝখানে অন্য কোনো কাজ না করা।
৪. মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুতে হাত দিয়ে হাত আগে-পিছে নাড়াচাড়া করা।
৫. মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুতে হাত লাগানোর পর উভয় হাত ঝেড়ে ফেলা।
৬. মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তুতে হাত রাখার সময় আঙুলগুলো খোলা রাখা।
যে অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েজ
ইসলামে তায়াম্মুম অজু বা গোসলের বিকল্প পবিত্রতা অর্জনের উপায়। যদি কেউ এমন কোথাও অবস্থান করে, যেখান থেকে এক মাইল বা এর বেশি দূরত্ব পর্যন্ত অজু-গোসলের জন্য পবিত্র পানি নেই অথবা অসুস্থ ব্যক্তি যদি পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা করে, তাহলে অজু বা গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি অম্বেষণ কর, তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ কর। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (সুরা নিসা: ৪৩)
যেসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়
মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তু যেমন বালু, পাথর, চুন ও সুরমা ইত্যাদি দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়। পোড়ামাটি, পাকা ইট, টাইলস, সিমেন্ট ও পাথরের মেঝে বা দেওয়ালেও (যদি ওপরে মাটিজাতীয় নয় এমন বস্তুর আবরণ না থাকে) তায়াম্মুম করা যায় যেহেতু এগুলোও মাটিজাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়।
লোহা, প্লাস্টিক, কাঠ, কাপড়, সোনা, রুপা, পিতল, কাঁচ, মাটিজাতীয় নয় এমন বস্তু দিয়ে তৈরি রঙ, কাগজ ও ছাই এসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যায় না।
শহরের পাকা মসজিদ বা বাড়ির দেয়াল যদি ইট, বালু বা সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করা হয় এবং তাতে কোনো রকম রঙ বা প্রলেপ না থাকে, তাহলে এ ধরনের দেয়ালে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে। আর দেয়াল যদি রঙ করা হয়, তাহলে রঙের উপাদান বিবেচনা করতে হবে। যদি রঙ চুন বা মাটি জাতীয় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, তবে তায়াম্মুম বৈধ হবে।
আর যদি ওই রঙ প্লাস্টিক, কেমিক্যাল বা তেল-জাতীয় কৃত্রিম উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, তবে তাতে তায়াম্মুম বৈধ নয়। যেহেতু এগুলো মাটিজাতীয় বস্তু নয় এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে পবিত্রতার মাধ্যম হিসেবে গণ্য হয় না।
মন্তব্য করুন