সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে চরাঞ্চলে হাওয়ায় দোলে ছনপাতা, ভাগ্য ঘোরে ছিন্নমূল মানুষের

আবদুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ): ভাঙন তান্ডব আর পলিবাহী স্রোতস্বীনি যমুনা। কখনো শান্ত, কখনো রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। গ্রাস করে আবাদি জমি, ভিটেমাটি, গ্রামীণ জনপদ। কখনো বুক উজাড় করে ঢেলে দেয় অনেক কিছু। পানি কমে যাওয়ার পর জেগে ওঠে ভাঙনের ক্ষতচিহ্ন, জাগে চর। মাইলের পর মাইল উর্বর পলিসমৃদ্ধ সেই চরের বুকে গজায় ছন, স্থানীয় ভাষায় যা কাইশা নামে পরিচিত।
এবারের বন্যার পানি নামার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিশাল চরাঞ্চল জুড়ে শোভা পাচ্ছে ছনপাতার সবুজ রঙ। ঝরে যেতে শুরু করেছে কাশফুল। হেমন্তের আকাশে সাদা মেঘ, আর নিচে হাওয়ায় দোল খাওয়া ছনক্ষেতের সবুজ ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে সোনালী রং ধারণ করতে শুরু করেছে।
জানা যায়, চরাঞ্চলের কয়েক হাজার প্রান্তিক কৃষক এই ছন সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ছনগুলো যখন এক থেকে দেড়ফুট লম্বা হয় তখন থেকেই কৃষকেরা তা সংগ্রহ করে পশুখাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি শুরু করে। চরে সকল বয়সী মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে ছন বা কাইশাগুলো কেটে গরুকে খাওয়ায়। বাজারেও এর বেশ চাহিদা। এরপর ধীরে ধীরে ছনগুলো বড় হলে এতে ফুল আসে। তখন পুরো চরকে মনে হয় একখন্ড সাদা আকাশ।
আরও পড়ুনএরপর হেমন্তের শুরু থেকেই ছন (কাইশা) কাটতে ব্যস্ত সময় কাটান সকলে। কেটে আনা ছনগুলো এক সপ্তাহ শুকানোর পর স্থানীয় হাটে বাজারে বিক্রি করে বেশ টাকা পান তারা। অনেক দূর থেকে ছন কিনতে পাইকার চলে আসে কৃষকের কাছে। স্তূপাকার করে রাখা ছনগুলোকে দরদাম করে কিনে নিয়ে যান তারা।
নতুন মাইজবাড়ি চরের সাবেক ইউপি সদস্য মোকলেছুর রহমান জানান, চরের ছিন্নমূল মানুষ বছরের চার থেকে পাঁচমাস ছন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন ছনগুলো বগুড়ার জেলার শেরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে যাচ্ছে ব্যাপক হারে। সেখানে স্থানীয়ভাবে ছন থেকে ডালা, ঝাঁকা, ফুলদানীসহ সংসারের নিত্য ব্যবহার্য অনেক জিনিস তৈরি হচ্ছে। যা এখন দেশের বাইরেও যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন