ভিডিও মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

৭ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হার

৭ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হার

শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৯ রান, হাতে ৪ উইকেট। উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা ও রাবেয়া খান—সব হিসাবেই ম্যাচটা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকে ছিল। কিন্তু ক্রিকেট নামের এই অনিশ্চয়তার খেলায়, নায়িকা হয়ে উঠলেন লঙ্কান অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু। তার সেই এক ওভারেই সব উলটে দিলেন তিনি—টানা চার উইকেট তুলে নিয়ে যেন কেড়ে নিলেন বাংলাদেশের জয়ের হাসি।

নাভি মুম্বাইয়ের ড. ডি.ওয়াই. পাটিল একাডেমি মাঠে শেষ ওভারের দৃশ্যটা যেন বিশ্বাস করাও কঠিন। ডাগআউটে বসে নিগার সুলতানা স্থির হয়ে আছেন—হেলমেট পর্যন্ত খোলেননি। চোখে অশ্রু, মুখে হতাশা। সতীর্থরাও কেউ কেউ চোখ মুছছেন। মাত্র ১২ রান দরকার ছিল ১২ বলে, হাতে ৬ উইকেট—সেখান থেকে ম্যাচ হার! এমন হারের বর্ণনা হয়তো ক্রিকেটের পাঠ্যবইয়েও নেই।

শ্রীলঙ্কা নারী দল যেখানে জয়ের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল, সেখান থেকে চামারি আতাপাত্থুর অবিশ্বাস্য বোলিং ও বাংলাদেশের নার্ভের ভাঙনে ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়। ৫০ ওভারের শেষে স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ ১৯৫/৯—মোটে ৭ রানের হারে ভেঙে চুরমার হলো স্বপ্ন।

৪৯তম ওভার শেষে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট, উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা (৭৭) ও রিতু মনি। সেখান থেকেই শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চামারি আতাপাত্থু বল হাতে নিয়ে যা করলেন, তা এক কথায় বিধ্বংসী।

 

  • প্রথম বলে এল এলবিডব্লিউ — রাবেয়া খান আউট।
  • পরের বলে নাহিদা আক্তার দৌড়ে রান নিতে গিয়ে রানআউট।
  • তৃতীয় বলে নিগার সুলতানা লং-অফে ক্যাচ!
  • চতুর্থ বলে মারুফা আক্তারও এলবিডব্লিউ।

শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৯, কিন্তু উইকেটে বাকি মাত্র একজন—নিশিতা আক্তার। শেষ পর্যন্ত কোনো অলৌকিক কিছু ঘটেনি, ব্যাট ঘুরলেও জাল কাটেনি। নিগারের চোখে জল, আর ড্রেসিংরুমে হতাশা। এক সময় যা ছিল সহজ জয়, তা শেষ হলো ব্যর্থতার গল্পে।

আরও পড়ুন

ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ফারজানা হক ৭ রানে রানআউট, রুবিয়া হায়দার শূন্য রানে ফিরলেন। কিন্তু তারপরই দলের আশা ফিরিয়ে আনেন দুই সিনিয়র—শারমিন আক্তার ও নিগার সুলতানা। দুজনের গড়া ১৩০ রানের জুটি জয়ের মঞ্চ প্রায় তৈরি করে দিয়েছিল। শারমিন অপরাজিত ৬৪* করে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেলেও পাশে কেউ থাকেননি।

তবে ম্যাচের মোড় ঘুড়ে যায় যখন ৩৬তম ওভারে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন শারমিন। তার পর থেকেই যেন ভেতরে ঢুকে পড়ে অস্থিরতা। রানের চাপে হঠাৎই ম্লান হয়ে যায় ব্যাটিং লাইনআপ। শেষ ৫ ওভারে দরকার ছিল ৩০ রান, অথচ উইকেট পড়েছে ৫টি!

নিজের ইনিংসে ৪৬ রান করার পর বোল হাতে নিয়েও একক নাটক রচনা করেন চামারি। ১০ ওভারে ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচে ফেরান তিনিই। নিগার, রাবেয়া, মারুফা—সব গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তার হাতে ধরা দেয়। তার সঙ্গে মধ্য ওভারে হাশিনি পেরেরা ও নিহালক্ষি দে সিলভার লড়াকু ইনিংস মজবুত করে লঙ্কানদের ২০২ রানের ইনিংস।

শেষ বাঁশি বাজার পর বাংলাদেশের ডাগআউটে নেমে আসে নিরবতা। কারও মুখে কোনো শব্দ নেই। নিগার স্থির হয়ে বসে আছেন, যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না কী ঘটল। এমন ম্যাচ কেউ হারতে পারে? শেষ ১২ বলে ১২ রান—ক্রিকেটে এর চেয়ে সহজ সমীকরণ খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু নার্ভ, চাপ আর সামান্য ভুল সিদ্ধান্তের মিশেলে সেই সহজটিই হয়ে গেল অসম্ভবের সমান।

বাংলাদেশ নারী দলের এই হার শুধু এক ম্যাচের হার নয়, বরং এক মানসিক ভাঙনের প্রতিচ্ছবি। জয়ের এত কাছে গিয়েও যখন হাতছাড়া হয়, তখন ব্যথাটা আরও গভীর হয়। নিগারদের চোখের জলে লুকিয়ে আছে সেই অপ্রকাশিত প্রশ্ন—“এমন ম্যাচও কেউ হারে?”

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট বন্ধ

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় নারী মাদক বিক্রেতার কারাদন্ড

সিরাজগঞ্জে ভালবেসে বিয়ে করে তিন মাস পরই লাশ হলো সুমী

৭ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হার

বগুড়ায় বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস ও জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালিত

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার বাড়ছে সময় ও পরিসর