অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ছেড়ে হুমকি, তরুণীর ঘরে মাদরাসার প্রভাষক, দেড় লাখ টাকায় রফাদফা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের কালাইয়ে কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে এক মাদরাসার আরবি বিভাগের প্রভাষকের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ওই তরুণীর ঘরে প্রবেশ করলে এলাকার লোকজন তাকে আটক করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই তরুণীর পরিবারের সাথে দেড় লাখ টাকায় রফা দফা করে। এসব ঘটনা উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের এলতা গ্রামে ঘটে।
স্থানীয় ও তরুণীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী মাদরাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক মাওলানা এমরান হোসেন চাকরির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কালাই উপজেলার এলাতা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে ঈমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি কবিরাজি চিকিৎসাও করেন। সে কারণে মেয়েলি সমস্যার কারণে এলতা গ্রামের ওই তরুণী ইমাম এমরান হোসেনের শরণাপন্ন হয়। এরই মধ্যে ঈমাম এমরান হোসেন ওই তরুণীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিয়ের কথা বলে একাধিকবার মেলামেশাও হয় তাদের মধ্যে। এসব ঘটনা ঈমাম এমরান হোসেন তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। কয়েকদিন আগে ওই তরুণী বিয়ের কথা বলায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে। এক পর্যায়ের তাদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ হয়।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই তরুণী উপজেলার মোলামগাড়ীহাটে তার নানার সাথে বেড়াতে গেলে সেখানে দেখা হয় ঈমাম এমরান হোসেনের সাথে। সেখানে তিনি জোরপূর্বক ওই তরুণীর হাত ধরে অটোরিকশাতে ওঠাতে চাইলে জনতা বাঁধা দেয়। পরে তারা যে যার মত বাড়িতে যায়।
এদিকে রাতে ঈমাম এমরান হোসেন আবারও ওই তরুণীকে মোবাইল ফোনে বলে, তার কথাতে রাজি না হলে আগের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। তখন বাধ্য হয়ে ওই তরুণী তার পরিবারের সদস্যদের কাছে সব খুলে বলে।
আরও পড়ুনআজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ঈমাম এমরান হোসেন গত রাতের কথামতে যোহরের নামাজের পর ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে ঘরের ভিতরে অবস্থান করেন। তখন পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনদের ডেকে নিয়ে দুইজনকে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঈমাম এমরান হোসেন দেড় লাখ টাকা দিয়ে এঘটনা রফাদফা করে সেখান থেকে উদ্ধার হন।
তরুণীর মামা রুবেল বলেন, আমার ভাগ্নীর বাবার বাড়ি বগুড়া শহরে। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে এখানেই থাকে। অনেকদিন ধরে সে অসুস্থ। তাই হুজুরের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিল। হুজুর কবিরাজি চিকিৎসা দেন। এরমধ্যে যে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা আসলে আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি। আজকে হুজুর বাড়িতে আসলে গ্রামের লোকজন এসে তাদেরকে আটকে রাখে। মামলা করতে চাইলে গ্রামের সবাই মিলে দেড় লাখ টাকা দিয়ে আপস করে দিয়েছে। টাকা নগদ দিয়েছে।
বটতলী মাদরাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক মাওলানা এমরান হোসেন বলেন, আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম এটা সত্য, তবে কোনো খারাপ কাজ করিনি। শুক্রবার রাস্তায় হাত ধরে টানাটানি করেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। দেড় লাখ টাকা দিয়ে মিমাংসা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো টাকা দেয়নি।
বিএনপি নেতা মুকুল হোসেন বলেন, ওই তরুণী আমার নিকট আত্মীয়। ঘটনা জানার পর সেখানে গিয়ে দেখি দেড় লাখ টাকায় তারা মিমাংসা করেছে। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, এবিষয়ে শুনেছি, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান করেছে। আর কেউ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন