বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী গমের দাম, দেশে বাড়তি দাম আটার

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ববাজারে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় গত বছরসহ চলতি বছরের এখন পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ গম আমদানি করেছেন দেশের আমদানিকারকরা। কিন্তু উল্টো চিত্র আটার বাজারে। গত এক মাসে আটার দাম বেড়েছে হু হু করে। আটার এই বাড়তি দাম চাপে ফেলেছে নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারে। কারণ, চালের পর বেশি ভোগ হয় আটা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। কোম্পানিগুলো তাদের প্যাকেটজাত আটার কেজি বিক্রি করছে ৫০-৫২ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ টাকা। খোলা আটার দামও ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের আটার দাম বাড়ায় ভোক্তাদের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে।
দেশি-বিদেশি তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর অতিমুনাফার প্রবণতা ছাড়া দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এসময়ে বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। গম আমদানিও বেড়েছে অনেকাংশে। তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে প্রতি টন গমের দাম ছিল ২৬৮ থেকে ২৭২ ডলার, তা এখন কমে ২১৪ থেকে ২১৯ ডলারে এসেছে।
শুধু গত বছরই নয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই ক্রমাগত কমছে গমের দাম। ২০২২ সালে গমের দাম ৫০০ ডলারে উঠেছিল। তবে দেশের বাজারের তথ্য বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আটার দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করা হলেও এরপর বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী হওয়ার সুফল পায়নি ভোক্তারা।
বরং, এখন হুট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। মাঝে কয়েক বছর দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি খোলায় সংকট ছিল। এখন সেসব সমস্যাও নেই। তারপরেও বাড়ছে দাম।
আরও পড়ুনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন গমের দাম কম ছিল, তখন কোম্পানিগুলো দাম সমন্বয় করেনি। কিন্তু যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছিল, তারা সঙ্গে সঙ্গে আটা-ময়দার দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়েছিল।
তখন পরোটা, বিস্কুট, ফাস্টফুডসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে, যা ভোক্তাদের প্রচণ্ড চাপে ফেলে। আবার তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। তারা মনে করে, সরকার কিছু করবে না। তাই গুটিকয়েক কোম্পানি যা ইচ্ছা তাই করে, কাউকে তোয়াক্কা করে না।
দেশে গমের চাহিদার ১৪-১৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। আর চাহিদার বাকি ৮৫ শতাংশই আমদানি হয়। ২০২৪ সালে প্রায় ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালে আমদানি হয়েছিল ৫৪ লাখ ১৭ হাজার টন। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি বেড়েছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ।
আমদানি বৃদ্ধির এই হার গত আট বছরে সর্বোচ্চ ছিল। এবছরও গম আমদানি বেড়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও আমদানির পরিমাণ প্রায় ৯ মাসে ৪৫ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে বলে তথ্য দিয়েছেন আমদানি সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন