ভিডিও শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

তৃষ্ণা একটি সংগ্রামী নারীর অনুপ্রেরণার গল্প

ছবি : সংগৃহীত,তৃষ্ণা একটি সংগ্রামী নারীর অনুপ্রেরণার গল্প

নিজের আলোয় ডেস্ক : বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে তৃষ্ণা রাণী এখন দেশের ফুটবল জগতের এক জ¦লজ¦লে নক্ষত্র। বোদা উপজেলার ভাসাইনগর গ্রামে এক দিনমজুরের ঘরে জন্ম তৃষ্ণার। দিনমজুর বাবার রক্ত-ঘামে গড়া সংসার আর না খেয়ে দিন কাটানো মায়ের অবর্ণনীয় কষ্টের ভেতর দিয়েই তিনি বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই সীমাবদ্ধতা ছিল চারদিকে, কিন্তু মনের জোর আর অদম্য স্বপ্নের কাছে দারিদ্র্য কোনো বাধাই হয়ে ওঠেনি। আজ তিনি দেশের হয়ে গোল করছেন, জয় এনে দিচ্ছেন বাংলাদেশকে।

শৈশবে তৃষ্ণার পরিবার ছিল আর্থিক সংকটে জর্জরিত। বাবার একমাত্র আয়ের উৎস দিনমজুরি, যা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর ছিল। অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোটানো তো দূরের কথা, অনেক সময় খালি পেটে অনুশীলন করতে হতো তৃষ্ণাকে। কিন্তু তার চোখে ছিল একটাই স্বপ্ন ফুটবল মাঠে দৌড়ানো, গোল করা এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করা। 


তৃষ্ণা রানীর গোল করার ক্ষুধা খুব দ্রুতই তাকে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল এবং লাওসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে তিনি সবার নজর কাড়েন। এর আগে ২০২২ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে জাতীয় দলে সুযোগ পান। ২০২৩ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে রানারআপ হয় বাংলাদেশ, সেখানে ভুটানের বিপক্ষে দুটি গোল করেন তিনি। এ ছাড়া এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে একটি গোল এবং ২০২৪ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জয়ের স্বাদ দেন।
তৃষ্ণার বাবা উমেশ বর্মন এখনো ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘সংসার চালানো খুব কষ্টকর। আমাদের জমি-ঘর কিছুই নেই, অন্যের জমিতে বাস করি। তবে মেয়ে দেশের হয়ে খেলছে, এর চেয়ে গর্বের কিছু নেই। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া একটি জমি আর ঘর।’

মা সুনিলা রানী জানান, ‘সংসার চালাতেই কষ্ট হয়, তৃষ্ণার খরচ দেব কীভাবে? শুধু চাই, সরকার যদি একটি ঘর আর জমি দেয়।’ একসময় পরিবারে মেয়েকে খেলার মাঠে যেতে দেওয়া হতো না। তৃষ্ণার চাচা সুরেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘আগে বিয়ের কথাই ভেবেছি। কিন্তু এখন আমরা গর্ব করি। গ্রামের সবাই তার খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকে।’

আরও পড়ুন

তৃষ্ণার ফুটবল জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। তিনি জানান, ‘২০১৮ সালে মেয়েদের নিয়ে কাজ শুরু করি। তখন অনেক পরিবার চাইত না মেয়েরা খেলুক। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। আজ আমাদের একাডেমি থেকে ছয়জন খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলছে, তৃষ্ণা তাদের মধ্যে অন্যতম।’
তৃষ্ণা নিজেও জানালেন তার স্বপ্নের কথা। তিনি বলেন, ‘আমার সব সময় ইচ্ছা ছিল দেশের হয়ে খেলব। শুরুটা ছিল খুবই কঠিন, কিন্তু হাল ছাড়িনি। এখন চাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে দিতে।’

তার চোখে এখন নতুন লক্ষ্য- বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো। অতীতের কষ্ট তাকে ভেঙে দেয়নি, বরং শক্তি জুগিয়েছে। তৃষ্ণা রানীর গল্প কেবল একটি ফুটবলারের সাফল্য নয়, বরং এটি এক সংগ্রামী মেয়ের অনুপ্রেরণার কাহিনি। দারিদ্র্যের শিকল ভেঙে যে স্বপ্ন জয় করা যায়, তার জীবন্ত প্রমাণ তৃষ্ণা।

আজ তিনি শুধু মাঠে গোল করছেন না, ভেঙে দিচ্ছেন সামাজিক বাধা আর আর্থিক প্রতিবন্ধকতার দেয়ালও। তার জীবনপথ অন্য অনেক মেয়েকে স্বপ্ন দেখাবে যে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো সীমাবদ্ধতাই সফলতার পথে বাধা হতে পারে না। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

জাতিসংঘ সভাপতির পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাংলাদেশকে কৃতজ্ঞতা ফিলিস্তিনের

আসন্ন নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় প্রত্যাশায় বিএনপি

মানবপাচারকারীদের কবল থেকে রক্ষা পেল ৩৮ জন, আটক ২

জার্মান ঐক্য দিবসে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

বগুড়া শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত