যুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি তবুও বীর মুক্তিযোদ্ধা

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম উত্তরপাড়িয়া। ১৯৮০ সালের ২২ জুন, ভুবেন চন্দ্র-সরলা দেবীর ঘরে জন্ম নেন নিরেন চন্দ্র সিংহ। রক্তক্ষয়ী ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ১০ বছর পর জন্ম-তবুও তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। বয়স কমিয়েছেন ৩০ বছর। নিজের বড় বোন হয়েছেন ৯ বছরের ছোট। রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। নিচ্ছেন মাসিক ভাতাসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা। তবে যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে কিছুই মনে নেই তার।
নিরেনের মত মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের মোখলেসুর রহমান চৌধুরী ও আব্দুস সালাম চৌধুরী। স্থানীয় (কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত) আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গণঅভ্যুত্থানের পর রয়েছেন আত্মগোপনে, মিলছে না কোন খোঁজ খবর।
৩০ লাখ মানুষের আত্মদানে স্বাধীন বাংলাদেশ। অনেকে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে হয়েছেন গেজেটভুক্ত যোদ্ধা। চেতনাকে পুঁজি করে এসব অযোদ্ধাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের।
যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে নিরেন চন্দ্র সিংহ বলেন, অনেক আগের ঘটনা এখন আর মনে নেই। আর জন্ম তারিখটা ভুল হয়েছে।
বড় বোন শ্রীমতি রাণী বলেন, সে আমার ছোট ভাই। আইডিতে ভুল হওয়ায় আমার চেয়ে ৯ বছর বয়সে বড় হয়ে গেছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা দবিরুল ইসলাম বলেন- হাসিনা সরকার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কারখানা নিয়ে বসেছিল। যুদ্ধের সময় জন্ম না হওয়া, শিশু বয়সে থেকেও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। যাদের কোন অংশগ্রহণ আমরা দেখিনি। নিরেন, মোখলেস চৌধুরী আর আব্দুস সালাম এরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।
আরও পড়ুনএমন আরও অনেকে আছে। বর্তমান সরকারকে এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট বাতিল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম বলেন, অতীত সরকারের আমলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্ম হয়েছে। সদর থানায় যুদ্ধের পরে ৩শ’ থেকে ৩৫০ যোদ্ধা ছিল। এখন ৮৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে।
বাকি উপজেলাগুলো বাদে। এসবের সব সুবিধা বঞ্চিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এমন কোন অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হবে।
মন্তব্য করুন