ভিডিও রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ি ফের উত্তপ্ত সক্রিয় বিশেষ মহল

খাগড়াছড়ি ফের উত্তপ্ত সক্রিয় বিশেষ মহল, ছবি: সংগৃহীত।

মফস্বল ডেস্ক: খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড চলছে। এ ঘটনার দায় কোনো তদন্ত ছাড়াই বাঙালিদের ওপর চাপানো হচ্ছে। আন্দোলনের নামে তিনদিন ধরে চলছে তাণ্ডব।

সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহনে হামলার পাশাপাশি দেদার কাটা হচ্ছে গাছ। সড়ক অবরোধ করে স্থবির করে দেওয়া হয়েছে জনজীবন। হেনস্তা করা হচ্ছে পর্যটকদের। এতে ধর্ষণের অভিযোগ ও বিষয়টি ঘিরে আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা শহরের সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরদিন ভোরে সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ের তিনজনের নামে মামলা করা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে ওই কিশোরীকে আটকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে তিনজন।

ঘটনা ঘটার সময় দাবি করা হয় ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা। এর কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় চয়ন শীলের ছবি মোবাইল ফোনে নিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন পাহাড়ি কয়েক যুবক। তারা চয়নদের বাড়িতে গিয়ে হানা দেন এবং ভাঙচুর চালায়। পরিবার থেকে তাদের জানানো হয়, চয়ন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের সুইডিশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়েন। তিনি গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে কাপ্তাই চলে যান এবং তখন থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। এরপর হানা দেওয়া পাহাড়ি যুবকরা চয়নের ছোট ভাই শয়ন শীলকে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে পেয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বর্তমানে তাকে ছয়দিনের রিমান্ডে রাখা হয়েছে। এমনকি তার বাবা যে দোকানে কাজ করতেন, সেখান থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়েছে।

নানামুখী ষড়যন্ত্র

ধর্ষণের অভিযোগ ও বাঙালি তরুণের বাড়িতে হানা দেওয়া নিয়ে যখন ধীরে ধীরে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে, সেখানে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দাবিতে তুমুল আন্দোলনের নামে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে একাধিক মহল। এতে সবচেয়ে বেশি ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে। এছাড়া উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে পাহাড়ের একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক একটি চক্র ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করেছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। তারা বলছেন, ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়কে অশান্ত করার অপচেষ্টা চলছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে দিতে খরচ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। মূলত কয়েকটি চক্র গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মামুন হত্যার জেরে সংঘটিত খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় তিনজনের মৃত্যুর বর্ষপূর্তির দিন থেকে পুরো জেলাকে উত্তপ্ত করার নানা ফন্দি করছিল।

সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ

গতকাল শনিবার কিশোরীকে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দফায় আহূত সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের শুরু থেকে পিকেটাররা ছিল মারমুখী। জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা কেটে যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়াসহ পর্যটকদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরে পিকেটার ও স্থানীয় বাঙালি যুবকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ও গুলতি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এর পর জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার জন্য পাহাড়িরা বাঙালিদের আর বাঙালিরা পাহাড়িদের দায়ী করছেন। হামলায় উভয়পক্ষের কতজন আহত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হলেও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ১২ জন চিকিৎসার জন্য যান বলে জানা গেছে।

স্বনির্ভর বাজার, মহাজনপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় এবং বিকাল ৩টা থেকে গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের কথা জানান বিজিবি খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরান কবীর উদ্দিন।

১৪৪ ধারা জারি করার পরও বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলা শহরের নারিকেল বাগান, খাগড়াছড়ি বাজার, পানখাইয়াপাড়া সড়ক ও আদালত সড়কে পুলিশ মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং ধাওয়া দেয়।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাঙালিদের অভিযোগ, তারা প্রতিরোধ করতে গেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের ওপর হামলা চালায়। অথচ পাহাড়িদের সঙ্গে নতজানু ও তোষামোদী করে মাথায় চড়িয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় পাহাড়িরা অভিযোগ করেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মদতে বাঙালিরা তাদের ওপর হামলা করার সাহস দেখিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনকে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ না দিয়ে গত বুধবার দুপুর ও বিকালে দুই দফায় দুই সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সাধারণ পাহাড়িদের সংক্ষুব্ধ করে তোলা হয়। বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ এবং শুক্রবার নিপীড়নবিরোধী সমাবেশের নামে খাগড়াছড়িতে ৯ উপজেলা থেকে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ জড়ো করা হয়। সমাবেশের নামে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা এবং পানছড়ি আঞ্চলিক সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয় এক ঘণ্টারও বেশি সময়। চট্টগ্রাম থেকে কাজ শেষে ফেরার পথে টহলদলের ওপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও কয়েকজন সেনাসদস্যকে আহত করা হয়। সেনাবাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পিছু হটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আটক শয়ন কি আসলে অপরাধী

ধর্ষণের অভিযোগে আটক শয়ন শীল প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় ঘটনার সময় রাত ৯টায় উল্লেখ করলেও গণমাধ্যমের-এর হাতে আসা কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে শয়নকে রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত খাগড়াছড়ি বাজারে বিভিন্ন দোকানে পূজার কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, দীঘিনালার ৯ মাইলে কৃত্রিকা ত্রিপুরা নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুকে হত্যার পরও বাঙালিরা ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগ করে পরিস্থিতি উপ্তপ্ত করে তোলা হয়েছিল। আন্দোলনের মাধ্যমে স্থানীয় পুলিশকে বাধ্য করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মর্মে দুই বাঙালির স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। পরে পিবিআইয়ের তদন্তে সগোত্রীয়রা জড়িত বলে প্রমাণ হয়।

দ্বিতীয় দিনের অবরোধের চিত্র

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ পালন করা হয়। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ অবরোধ চলে। অবরোধের কারণে সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করেনি।

অবরোধকারীরা খাগড়াছড়ি-ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বলপিয়া আদাম এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে গাছ কেটে ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। অবরোধের সমর্থনে পিকেটিংও করে তারা। তবে শহর এলাকায় হালকা কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশকোচগুলো বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে। যারা সাজেকে ঘুরতে এসেছেন, তারা চরম বিপাকে পড়েন। অনেক পর্যটককে তিন-চার কিলোমিটার হেঁটে শহরে ঢুকতে দেখা গেছে। দুপুরে আলুটিলার পুনর্বাসন এলাকায় পানছড়িতে লাশ নামিয়ে চট্টগ্রামে ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে পিকেটাররা।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা সাংবাদিককে জানান, অবরোধের কারণে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জনজীবন স্বাভাবিক আছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এছাড়া সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমরা ৯টি আইন সংশোধন করেছি : সিইসি

প্রবাসীরা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ : প্রধান উপদেষ্টা

আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ : সিইসি

নাটোর লালপুরে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন 

ইমরানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে বিশাল বিক্ষোভ

শারদীয় দুর্গোৎসবে আজ মহাষষ্ঠী