রংপুরে নীল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের কদর দেশ ও বিদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে

রংপুর প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে ১ হাজার কেজি নীল (ইন্ডিগো) উৎপাদনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে রংপুরের অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান লিভিং ব্লু। ইতোমধ্যে আড়াইশ’ কেজি নীল উৎপাদিত হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির নীল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরাও মূল্য ভালো পাওয়ায় নতুন করে নীল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এখানকার উৎপাদিত নীল মানসম্পন্ন হওয়ায় এই নীল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে।
জানা যায়, রসিক ১১নং ওয়ার্ডের রাজেন্দ্রপুর গোয়ালপাড়া এলাকায় ২০০৬ সালে কেয়ারের ‘নিজেদের জন্য নিজেরা’ নামের একটি প্রকল্পের অধীনে যাত্রা শুরু করে লিভিং ব্লু। তখন প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘নিজেরা কটেজ অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ’ (এনসিভিআই)। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের শুরুতে কেয়ারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসে ‘লিভিং ব্লু’ একটি স্বতন্ত্র এবং স্ব-চালিত সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। যা কৃষকদের আবার নীলচাষে যুক্ত করে।
প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মীরা আগের বছরের জমিয়ে রাখা নীল দিয়ে দেশি বিদেশি অর্ডারের বিপরীতে কাথা, স্ক্রাব, শাড়ি, টোট ব্যাগ, কুশন কভার, মেয়েদের পোশাক, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, জ্যাকেট এবং শাল তৈরি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে বছরের জুলাই মাস থেকে জমির উৎপাদিত গাছের নীল পাতা সংগ্রহ করে আনা এবং নীল উৎপাদনে আরও অনেক অস্থায়ী কর্মী যোগ দেন। কৃষকের জমি থেকে নীলের পাতা কর্তন করে আনা পর্যন্ত ‘লিভিং ব্লু’র রয়েছে নিজস্ব ৯ সদস্যের একটি দল।
চলতি বছরে প্রথম ২৫ শতক জমিতে নীলের আবাদ করেছেন ১১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাজেন্দ্রপুরের কানপাড়া এলাকার কৃষক মাসুদ রানা। তিনি জমিতে আলু ও মরিচের আবাদ তোলার পর মার্চের শেষে ‘লিভিং ব্লু’ থেকে পাওয়া ১ কেজি নীলের বীজ বপণ করেন। গত ১৮ জুলাই জমির নীল পাতা প্রথম কর্তন করেছেন। এরইমধ্যে প্রায় ১ হাজার কেজি পাতা বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকায়।
আরও পড়ুনদ্বিতীয়বার পাতা কর্তন করেই তিনি জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। তিনি জানান, জমিতে নীল চাষ করতে বীজ বিনামূল্যে পেয়েছেন। এমনকি পাতা কর্তন ও বহনে তার কোন খরচ হয়নি। শুধু জমি তৈরি ও সার প্রয়োগে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার টাকা। এছাড়াও জমিতে থাকা প্রায় ২০ মণ অবশিষ্ট নীল গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে জেলায় নীলের আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে ২০২৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে সাড়ে ১০ হেক্টর। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (অব.) উদ্যান বিশেষজ্ঞ খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আমি চাকরিতে থাকাকালীন নীল গাছ নিয়ে অনেক কাজ করেছি।
এই গাছ অনেক আগে থেকে কৃষকরা রংপুরসহ আশেপাশে আবাদ করতো। আগে নীল গাছ মাল গাছসহ বিভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত ছিলো। তারা মূলত নীলের পাতা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, জৈবসার এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন। এক যুগ আগে নীল চাষের জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হেক্টর।
মন্তব্য করুন